প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে টোকিও অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জন, মেরি কমের কাছে বয়স কেবল সংখ্যা মাত্র

মঞ্চটা তৈরিই ছিল তাঁর জন্য। উল্টোদিকে বক্সিং গ্লাভস হাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফিলিপিন্সের আইরিশ ম্যাগনো। নীল ড্রেস পরে মঞ্চে উঠে এলেন তিনি। হতে পারে ৩৭ বছর বয়স। কিন্তু মণিপুরের সেই কঠিন দিনগুলো পেরিয়ে তিনি যে আরও পরিণত, আরও কঠিন হয়েছেন। কিংবদন্তি তকমাকে দূরে সরিয়ে রেখে তিনি যেন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। টোকিও’র মাটি যে করেই হোক স্পর্শ করতেই হবে। বাকি খেলা সেখানে।

আরও পড়ুন
শুটিং-এ বিশ্বরেকর্ড গড়ে সোনা বাংলার মেহুলির, নজর অলিম্পিক্সেও

শুধু কি মেরি কমেরই ইচ্ছা? কেবল তা তো নয়। গোটা দেশ তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে। আজও তাঁর এক একটা পাঞ্চ, আপারকাটে যেন নিজেদের লড়াইকেই খুঁজে পায় আপামর ভারতবাসী। ছ’বার বিশ্বসেরার সিংহাসনে বসেছেন মেরি। সেইজন্য লড়াইটা যে সহজ হয়ে যাবে, সেটা একদমই ভাবেন না তিনি। পরিশ্রম, যার কোনো বিকল্প খোঁজার চেষ্টাও করেননি এম সি মেরি কম। মনে পড়ছে সেই অমর ডায়লগ? ‘ফাইট, কোনি ফাইট!” মেরি কমের কানেও কে যেন সারাক্ষণ বলে চলেছিল- ‘ফাইট, মেরি ফাইট।’

আরও পড়ুন
বাতিল মোবাইল থেকে ধাতু নিষ্কাশন করে তৈরি হবে টোকিও ২০২০ অলিম্পিকের সমস্ত পদক

এই লড়ে যাওয়ার ইচ্ছা, নিজের বয়সকে এক ঘুঁষিতে উড়িয়ে দিয়ে জান লড়িয়ে দেওয়া—এই জিনিসগুলোই মেরি কম তৈরি করতে সাহায্য করেছে। তাই তো যখন জর্ডানের অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জনের লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ ম্যাগনোকে ৫-০ স্কোরে উড়িয়ে দেন, তখন মুখে ফুটে ওঠে সেই পরিচিত ‘মেরি’ হাসি। হাতে ধরেছিলেন টোকিও অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জনের টিকিট। হয়ত মনে পড়ে যাচ্ছিল ২০১২-এর কথা। সেবারই লন্ডন অলিম্পিকে প্রথমবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল মেয়েদের বক্সিং। ব্রোঞ্জ জেতেন মেরি কম। এবার কি পদকের রংটা বদলাবে? লড়াই শেষ হয়নি। পরিশ্রমও শুরু হবে আবার। যে করেই হোক, বদলাবেনই ৩৭ বছরের কিংবদন্তি…

আরও পড়ুন
অলিম্পিকে ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক তিনি, ডাক পেয়েছিলেন আর্সেনাল ক্লাব থেকেও

আমরা বাঙালিরা কথায় কথায় টেনে আনি রবীন্দ্রনাথকে। এখানেও সেই সুযোগটা আর ছাড়া গেল না। মেরির ইতিহাস, তাঁর লড়াই, অলিম্পিক— সমস্ত কিছু প্রেরণা দেয়। জীবনকে দেখতেও শেখায়। মনে পড়ে যায় মণিপুরেরই আরেক রাজকন্যে চিত্রাঙ্গদার কথা। যিনি যুদ্ধ করেছেন প্রবল বিক্রমে, রুখে দাঁড়িয়েছেন অর্জুনের বিরুদ্ধেও। অস্ত্রচালনার পাশে উঠে এসেছে প্রেমও। উঠে এসেছে সংসার। মেরি কম যেন সেই চিত্রাঙ্গদাকেই মনে করায়। তিনি নিজেও যে মণিপুরের মেয়ে। নিজের কাজের মধ্যেই প্রমাণ করেছেন ‘নহি দেবী, নহি সামান্যা নারী।’ দীনদরিদ্র অবস্থা থেকে উঠে এসেছেন। জীবনটাই যে একটা বক্সিং রিং। প্রতি মুহূর্তে খেলা চলছে। থেমে যেতে শেখেননি তিনি। অলিম্পিকেও থামবেন না। যুদ্ধটা যে জারি আছে! হাজার হোক, তিনি যে চিত্রাঙ্গদার দেশের মেয়ে…