যুদ্ধের স্মৃতি থেকে মুক্তি দিতে বই-থেরাপি সিরিয়ায়

সিরিয়ার (Syria) উপকূলীয় শহর টারটুস (Tartus)। সেখানেই রাস্তার ধারে ছোট্ট একটি কিয়স্ক। তার সামনে ইতস্তত ছড়ানো রয়েছে কিছু বসার বেঞ্চ, ছাতা। উপরে সাইনবোর্ডে স্থানীয় ভাষায় লেখা, বিনামূল্যে বই পড়ুন। 

টারটুসে ছোট্ট এই দোকানটি পরিচিত ‘উইসডম সেলার’ (Wisdom Seller) নামে। মাস কয়েক আগের কথা, ৩২ বছর বয়সি সিরিয়ান বই বিক্রেতা মহম্মদ জাহেরের (Md Zaher) উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই বই-এর দোকান। দোকান বললে ভুল হবে। আসলে উইসডম সেলার একটি সামাজিক প্রকল্প। বিগত কয়েক দশক ধরেই যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া। প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। দেশ ছেড়েছেন লক্ষাধিক। যাঁরা এখনও সে দেশে টিকে রয়েছেন, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাঁদেরও। জাহেরের নিজের অভিজ্ঞতাও খুব একটা ভালো নয়। যুদ্ধের আবহে নিজের দোকান, বাসস্থান হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছিলেন তিনি। গ্রাস করেছিল হতাশা।

সেই দুর্দিনে বই-ই একমাত্র সঙ্গী হয়ে উঠেছিল তাঁর। জাহের বুঝতে পেরেছিলেন শুধুমাত্র বই পড়লেই মধ্যে দিয়েই শান্ত হয় মন। যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতিকে মুছে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে বই-এর মধ্যেই। আর সেখান থেকেই এই কিয়স্ক তৈরির পরিকল্পনা করেন তিনি। সিরিয়াবাসীকে সুযোগ করে দেন বিনামূল্যে বই পড়ার। শুধু তাই নয়, কোনো বই-এর ১৫ পাতার বেশি পড়লে বিনামূল্যে এক কাপ কফিও প্রদান করে থাকেন জাহের। বলাই বাহুল্য, তাঁর এই বই-থেরাপিতে রীতিমতো উপকৃত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। প্রতিদিনই অন্ততপক্ষে শ-খানেক মানুষ ভিড় জমান তাঁর এই ছোট্ট কিয়স্কে। আশ্চর্যজনকভাবেই তার একটি বড়ো অংশ তরুণ-তুর্কিরাই।

তবে জাহেরের ক্ষমতা সামান্যই। সবমিলিয়ে মাত্র হাজার দুয়েক বই রয়েছে তাঁর কিয়স্কে। অবশ্য একসময় এর থেকেও কয়েকগুণ বই থাকত তাঁর দোকানে। যুদ্ধের সময় থেকেই হঠাৎ করে বদলে গিয়েছিল পরিস্থিতি। ক্রমশ কমতে থাকে সিরিয়ান মুদ্রার মূল্য। সেইসঙ্গে বই ছাপার খরচ বৃদ্ধি পায় ৬ গুণ। ফলে, একদিকে যেমন সিরিয়ায় ছাপার কাজ বন্ধ হয়ে যায়, তেমনই বই-এর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রি বন্ধ করেন অধিকাংশ সিরিয়ান বই বিক্রেতারাই। 

জাতিসংঘের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে ৯০ শতাংশ সিরিয়ান নাগরিক বসবাস করছেন দারিদ্রসীমার নিচে। ৮০ শতাংশ মানুষ ভুগছেন খাদ্য-নিরাপত্তাহীনতায়। ফলে বই কিনে পড়া তাঁদের কাছে বিলাসিতাই বটে। এমন পরিস্থিতিতে জাহেরের এই কিয়স্ক মুক্তির স্বাদ দিচ্ছে সিরিয়ান বইপোকাদের…

Powered by Froala Editor