মহিলা বাগ ঝালরা: আলোর আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা এক গল্প

রাজস্থান— নামটা শুনলেই একদিকে যেমন মনে আসে ধু ধু বালি, উটের গল্প; তেমনই মনে পড়ে জয়সলমীর ফোর্ট, জুনাগড় ফোর্টের মতন বহু ঐতিহাসিক স্থাপত্যের কথাও। প্রতি বছর দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকরা আসেন সেই ইতিহাসকে দেখতে। তবে এইসবের মাঝে আরও কিছু জায়গা আছে, যা ঐতিহাসিক, স্থাপত্যের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য হলেও, গাইডবুকে নাম আসে না তাদের। যোধপুরের মহিলা বাগ ঝালরা আড়ালে থাকা সেইসব ইতিহাসেরই একটি উদাহরণ।

প্রকৃতপক্ষে এটি একটি স্টেপওয়েল, একপ্রকার কুয়োই বলা যায়। কিন্তু এর বিশেষত্ব হল স্থাপত্যে, আর অভিনবত্বে। গোলাপি পাথরে তৈরি পুরো গঠনটাই নেমে গেছে গভীরে। একদম নীচে জল, আর দেওয়ালের ধার ঘেঁষে নীচ অবধি নেমে গেছে ছোট ছোট সিঁড়ি। এই সিঁড়ির ব্যবহারই একে অভিনব করেছে; সাথে অবশ্যই রয়েছে বিশাল আকার। বলা হয়, মায়লা বলে কোন এক রক্ষিতার নামে এর পরিচিতি তৈরি হয়। পরবর্তীকালে, এই ‘মায়লা’-ই পরিবর্তিত হয়ে যায় ‘মহিলা’-তে। আগে এটি একটি বড় বাগানের অংশ ছিল; এখন বাইকের আওয়াজ, রাস্তা, দোকান-বাজারের মাঝে সেই দৃশ্যটা কল্পনা করা একটু কঠিনই বটে।      

প্রাচীন ভারতে এই স্টেপওয়েলের ব্যবহার অবশ্য বেশকিছু জায়গায় লক্ষ্য করা গিয়েছিল। মূলত বিভিন্ন ঋতুতে জল সংরক্ষণ ও ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হত এইগুলিকে। প্রখর গরমে জলস্তর নেমে গেলে সিঁড়ি বেয়ে নেমে সেই জল ব্যবহার করা যেত; আবার বর্ষায় উঠে আসত সেই জল। একবিংশ শতাব্দীর ভারতে যখন নানা জায়গায় জলের সমস্যা, সেই পরিস্থিতিতে জল সংরক্ষণের এই পুরনো পদ্ধতি ভাবাতে বাধ্য করে আমাদের। সময় চলে যায়, ইতিহাসের টুকরোগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে আমাদের চারপাশে। অথচ ক’জন জানি তাদের, ক’জন চিনতে পারি? মহিলা বাগ ঝালরা’র একদম কাছেই যোধপুর তথা রাজস্থানের অন্যতম দ্রষ্টব্য মেহরানগড় ফোর্ট। গাইড, পর্যটকদের ভিড়ে জমজমাট সেই জায়গা। অথচ মহিলা বাগ ঝালরায় হাতেগোনা পর্যটকদের যাতায়াত। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবও স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়। চিনিয়ে না দিলে, হয়ত কেউ বুঝতেও পারবে না তাকে। রূপকথার গল্পের সুয়োরানি-দুয়োরানির মতই সেখানে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকে দুটি স্থাপত্য, দুটি ইতিহাস।