ধুলোময় বর্তমানকে দেখে কখনই ধারণা করা যাবে না এর অতীতকে। ১৯২৫ সালের ২৫ জুন আত্মপ্রকাশ করে সোদপুরের এই খাদি ভবন। স্টেশনের একদম কাছেই ৩৪ বিঘা জমি কিনে এটি তৈরি করা হয়েছিল। খাদির ট্রাস্টের সঙ্গে শুরুর দিন থেকে যুক্ত ছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। তিনি ছিলেন ট্রাস্টের সভাপতি। এছাড়াও ছিলেন বিজ্ঞানী সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত। প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ছাত্র এবং বেঙ্গল কেমিক্যালের বিজ্ঞানী হিসেবে তাঁর পরিচিতি তো আছেই। তাঁর আসল পরিচয় অবশ্য অন্যত্র। তিনিই প্রথম ভারতে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র তৈরি করেছিলেন। এমনকি, সেই সময়ের বিখ্যাত সুলেখা কালির ফর্মুলাও ওঁরই তৈরি করা।
যাই হোক, ১৯২৭ সালের জানুয়ারিতে সোদপুরের এই আশ্রমটির উদ্বোধন করতে আসেন মহাত্মা গান্ধী। সেই থেকে এই আশ্রমের সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তার সূত্রপাত। তারপর একাধিক সময় এখানে এসেছিলেন তিনি। থেকেছিলেন। আপন করে নিয়েছিলেন এই জায়গাটিকে। নানা জায়গায় সোদপুরের খাদি আশ্রমকে নিজের ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ বলেছেন গান্ধীজি। তবে আরও একটা কারণে এই বাড়ি গুরুত্বপূর্ণ। সালটা ১৯৩৯। সিতারামাইয়াকে পরাজিত করে কংগ্রেসের ত্রিপুরি অধিবেশনের সভাপতি হন সুভাষচন্দ্র বসু। তার পরবর্তী সময় গান্ধীজি-সহ কংগ্রেসের অন্য কয়েকজন নেতাদের সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্যের ঘটনা আমরা কমবেশি সবাই জানি। ২৯ এপ্রিল, এই সোদপুর খাদি প্রতিষ্ঠানের বাড়িতে বৈঠকের পরই সুভাষচন্দ্র বসু কংগ্রেস ছাড়েন। তার পরের গল্প তো সবারই জানা।
এত ইতিহাস জড়িত যেখানে, সেটি আজ কোনরকমে ধুঁকছে। অনেকে এই জায়গার গুরুত্ব সম্পর্কে একেবারেই ওয়াকিবহাল নয়। চত্বরে ঢুকলে একটা কোণে দেখা যাবে জাতির জনকের মলিন, বিবর্ণ মূর্তি। গান্ধীজি শেষবার এখানে এসেছিলেন ১৯৪৭ সালের ৯ আগস্ট, স্বাধীনতার কিছুদিন আগে। তারপর সেই যে বেরোলেন, আশ্রমের যাবতীয় আলো যেন তখনই চলে গেল। একেবারে জনশূন্য একটা চত্বর। একটা সময়, মূল বাড়িটা ছাড়াও রন্ধনশালা, কর্মীদের থাকার জায়গা। সেইসব কবেই ভেঙে গেছে। শুধু ইটগুলো পড়ে আছে এধারে ওধারে। ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদ আর কবে তৈরি করব আমরা?