ইতালিতে সাধারণ মানুষকে খাবার যোগাচ্ছে মাফিয়ারা, চিন্তিত প্রশাসন

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে লকডাউন চলছে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশেই। বন্ধ দোকানপাট থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য। অনেক দেশের মতোই ইতালির অর্থনীতিও ভেঙে পড়েছে। তার মধ্যে বহু মানুষের রোজগার বন্ধ। আর এমন পরিস্থিতিতেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল সেখানকার মাফিয়ারা। মানুষের বাড়ি-বাড়ি তারা পৌঁছে দিচ্ছে খাবারের প্যাকেট। ইতালির মাফিয়াদের এমন উদ্যোগ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে সেখানকার প্রশাসনকেও।

ইতালির দীর্ঘদিনের ইতিহাসের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে মাফিয়াদের ইতিহাস। নানা ধরনের বেআইনি ব্যবসা তো আছেই, সেইসঙ্গে চলে খুন লুটতরাজ। রাষ্ট্রের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক মাফিয়ারা। আর সাধারণ মানুষের কাছে? ভয় আর ভক্তির সঙ্গে কি সামান্য ভালোবাসাও মিশে থাকে না সেখানে? এই মাফিয়াদের নিয়েই তো তৈরি হয়েছে অজস্র কিংবদন্তি কাহিনি। দীর্ঘ অনাহারের পর দরজায় খাবারের প্যাকেট নিয়ে কড়া নাড়ে যে মানুষটি, সেই তো সাক্ষাৎ 'গডফাদার'।

কিছুদিন আগে জেন অঞ্চলে দরিদ্র্য মানুষদের মধ্যে খাবার বিতরণ করতে গিয়ে পুলিশের জেরার মুখে পড়ে একদল মাফিয়া। পুলিশ সামাজিক কাজে বাধা দিচ্ছে, এই বলে বিতর্কও শুরু হয়। তবে মাফিয়াদের এই কাজকে নিছক সামাজিক কাজ হিসাবে দেখতে নারাজ অনেকেই। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ফেডেরিকো বারেসের মতে, মাফিয়ারা সবসময় একটা বিকল্প রাজত্ব তৈরি করতে চায়। আর এই কাজে সেখানকার মানুষদের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে নজর তো দিতেই হবে। কিন্তু শেষমেশ তাদের নানাধরণের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত করাই মাফিয়াদের প্রকৃত উদ্দেশ্য। তবে দরিদ্র মানুষদের কাছে যথেষ্ট সাড়া পেয়েছে মাফিয়ারা। আর এ-বিষয়ে চিন্তিত প্রশাসনও। মাফিয়া দমন বিভাগের অফিসার নিকোলা গ্রাতেরি মনে করছেন, লকডাউনের পর আবার অর্থনীতি চাঙ্গা না হলে এই সংকট মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়বে।

ইতালির রাজনীতিতে মাফিয়াদের প্রভাব দীর্ঘদিনের। বিগত কয়েক বছরেই বহু নির্বাচিত প্রতিনিধির সঙ্গে মাফিয়াদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। আর লকডাউনের সুযোগে মাফিয়ারা নিজেদের জনসমর্থন বৃদ্ধি করলে তার প্রভাব এসে পড়বে রাজনীতিতেও। কিন্তু সবার আগে যে মানুষের বেঁচে থাকাটাই জরুরি। মাফিয়াদের এই উদ্যোগের ফলে মানুষ অন্তত নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। এই স্বপ্নটুকু না থাকলে আর কিসের ভবিষ্যত? কিসের রাজনীতি?