দেহের আয়তন বাড়লেও, বয়স বাড়ে না গলদা চিংড়ির!

মানব সভ্যতার প্রাচীনতম মহাকাব্যগুলির মধ্যে অন্যতম গিলগামেশের মহাকাব্য। সেই আদি কাল থেকেই মানুষ সন্ধান শুরু করেছে অমরত্বের। মেসোপটেমিয়া সভ্যতার কবিই হোক কিংবা লাস্ট ক্রুসেড— মানুষের শিল্প-কথায় বার বার উঠে এসেছে অমৃতের বর্ণনা। কিন্তু ওই যে, জন্মিলে মরিতে হবে— এটাই তো চিরসত্য। বয়স বৃদ্ধিকে ঠেকিয়ে রাখে, এমন সাধ্য কার? মানুষ পারে না ঠিকই, তবে মানুষের থেকে এই বিষয়ে এগিয়ে রয়েছে সামান্য একটি অমেরুদণ্ডী প্রাণী। গলদা চিংড়ি (Lobster)। 

হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন, গলদা চিংড়ি। জলজ এই প্রাণীটির সঙ্গে গলায় গলায় সম্পর্ক বাঙালির। বিশেষত চিংড়ি-ইলিশ ছাড়া বাঙালির ফুটবলপ্রীতিকে একভাবে অবর্ণনীয়। যাই হোক, এই গলদা চিংড়ির জিনেই রয়েছে রয়েছে চিরযৌবনের (Immortality) রসদ। এমনটাই জানাচ্ছেন গবেষকরা। হাত খানেক লম্বা হলেই, গলদা চিংড়িকে আমরা প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে ধরে নিই। তবে আদতেও বিষয়টা তেমন নয়। দেহের আয়তন বাড়লেও, তাদের বয়স আটকে থাকে যৌবনেই। 

একটু খুলেই বলা যাক বিষয়টা। আদতে যেকোনো প্রাণীর শারীরিক বৃদ্ধির পিছনেই দায়ী কোশ বিভাজনের প্রক্রিয়া। একইসঙ্গে নানাধরনের হরমোনের ক্ষরণও প্রাপ্তবয়স্ক করে তোলে প্রাণীদের। তবে একটা নির্দিষ্ট সময় পর বিভাজন বন্ধ হয়ে যায় দেহকোশের। বন্ধ হয়ে যায় বৃদ্ধি। এমনকি প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মতেই ধীরে ধীরে মারা যেতে থাকে দেহকোশ। আর সেই কারণেই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে কর্মক্ষমতা, দৃষ্টিশক্তি কিংবা অন্যান্য অনুভূতিও। 

কিন্তু কেন বন্ধ হয়ে যায় এই কোষ বিভাজন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই বিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করেছিলেন মানব-ক্রোমোজম নিয়ে। সেখানেই ধরা পড়ে, একটি বিশেষ ঘটনা। মানুষের ক্রোমোজমের দুই প্রান্তেই একটি বিশেষ বর্ম থাকে, যা পরিচিত টেলোমেরেস নামে। উল্লেখ্য, এই টেলোমেরেস থেকেই শুরু হয় কোশ বিভাজন। কিন্তু প্রতিবার কোশ বিভাজনের পর, এই অংশটি ছোটো হতে থাকে। আর সেই কারণেই, একটি নির্দিষ্ট সময় পর বন্ধ হয়ে যায় দেহজ বৃদ্ধি। বিশেষত এই সময়টিকেই, যৌবনের শেষ বলে ধরে নেওয়া হয়। 

তবে চিংড়ির ক্ষেত্রে, কোশ বিভাজনের পরেও অক্ষত থাকে টেলোমেরেসে। আর তার জন্য দায়ী টেলোমারেজ নামে একটি উৎসেচক। বলতে গেলে এই উৎসেচকই অমরত্ব প্রদান করে চিংড়িকে। ফলে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েই চলে তার আয়তন। তবে যৌবন ফুরোয় না। 

প্রশ্ন থেকে যায়, এমনটাই যদি সত্যি হয়, তবে তো চিংড়ির মারা যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। সত্যিই কি তেমনটা হয়? না, পৃথিবীতে তাদের অস্তিত্বও চিরস্থায়ী নয়। তবে বার্ধক্যের জন্য মারা যায় না তারা। আসলে, সাপের মতোই বার বার খোলস পরিবর্তন করে চিংড়ি। আয়তন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই খোলস পরিবর্তন করতে হয় তাদের। তবে চিংড়ির আয়তন যত বাড়ে, স্বাভাবিক নিয়মেই তত বেশি সময় লাগে তার খোলস তৈরি করতে। আর এই মধ্যবর্তী সময়েই প্রকৃতির সঙ্গে সংঘাতে মৃত্যু হয় তাদের। খোলসের অনুপস্থিতি কিংবা অপরিণত খোলসের কারণেই সহজেই তারা শিকার হয় অন্যান্য জলজ খাদকের। তেমনটা না হলে, আজীবনই বেঁচে থাকতে পারে চিংড়ি। তবে শুধু চিংড়িই নয়, এই একই ধরনের ক্ষমতা রয়েছে জেলিফিশেরও…

Powered by Froala Editor