হার্ভার্ডের চাকরি ছেড়ে ভারতের দরিদ্র শিশুদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন সিমলার ক্রীড়াবিদ

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় (Harvard University)। চলতি শতকের প্রথম দিকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরুষ ও মহিলা স্কোয়াশ দলের প্রশিক্ষক ছিলেন তিনি। এমনকি তিনি ৮ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ-জয়ী পাকিস্তানি স্কোয়াশ খেলোয়াড় জানশের খানের মেন্টরও। সতীন্দর বাজওয়া (Satinder Bajwa)। মোটা অঙ্কের চাকরি, বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে বর্তমানে ভারতের দরিদ্র শিশুদের জন্যই লড়াই করে চলেছেন ৬০ বছর বয়সি ক্রীড়াবিদ। প্রতিষ্ঠা করেছেন একাধিক স্পোর্টস অ্যাকাডেমি। 

বাজওয়ার এই লড়াইয়ের কথা বলার আগে তাঁর বর্ণময় জীবনের গল্পও বলে নেওয়া দরকার। ভারতের শিমলায় জন্ম ও বেড়ে উঠলেও, পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার জন্য ব্রিটেনে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। তারপর ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি। সেইসঙ্গেই চলত স্কোয়াশ খেলা (Squash)। একুশ শতকের শেষের দিকে এই খেলাকেই পেশা হিসাবে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বাজওয়া। প্রথমে আদায় করেন প্রশিক্ষকের সার্টিফিকেট। তারপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষকের চাকরি পেতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি তাঁর। 

ঠিকঠাক চলছিল সবই। তবে ২০০৬ সালে একটি বিশেষ প্রকল্প চালু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রত্যেক স্পোর্টস কোচকেই জানানো হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বাইরে তাঁদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিতে হবে স্থানীয় দরিদ্র শিশুদের। উল্লেখ্য, তাঁর হাত ধরেই হার্ভার্ডে রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে কিডস স্কোয়াস। এমনকি মার্কিন দলে সুযোগ পান তাঁর থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বহু তরুণ খেলোয়াড়। 

এই ঘটনাই ভাবিয়ে তোলে বাজওয়াকে। দারিদ্রের কথা যদি চিন্তা করা যায়, তবে আমেরিকার থেকেও বহুগুণ ভারতীয় শিশু বসবাস করে দারিদ্রসীমার নিচে। তাদের মেধা থাকলেও, প্রশিক্ষণের প[অরিকাঠামো নেই কোনো। এর পরই চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন বাজওয়া। ২০০৯ সালে চলে আসেন ভারতে। চণ্ডীগড়ের আটাওয়া গ্রামে পৈতৃক জমিতে খুলে ফেলেন দুটি অ্যাকাডেমি। একটি যোগব্যায়েমের অন্যটি স্কোয়াশের। ‘খেলশালা’-খ্যাত সেই অ্যাকাডেমিই বিগত এক দশকে বদলে দিয়েছে উত্তর ভারতের পরিস্থিতি। 

প্রথম বছরে মাত্র ৩৭ জন শিক্ষার্থী ছিল তাঁর। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সংখ্যা। বর্তমানে সবমিলিয়ে প্রতিবছর প্রায় ১২৫ জন শিক্ষার্থী অনুশীলন নেয় তাঁর কাছে। আটাওয়ার পাশাপাশি পাঞ্জাবের মাজরা গ্রামেও দ্বিতীয় একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র খুলেছেন বাজওয়া। পাশাপাশি স্কোয়াশের সঙ্গে খেলার তালিকায় জুড়েছে টেনিস, ব্যাডমিন্টন, খো-খো। সেইসঙ্গে দরিদ্র শিশুদের শিক্ষিত করে তুলতেও স্থানীয় শিক্ষকদেরও ‘খেলশালা’-য় নিযুক্ত করেছেন বাজওয়া। শুনতে অবাক লাগবে, ‘খেলশালা’-য় জাতীয় মানের প্রশিক্ষণ পরিষেবা পেতে স্থানীয় শিশুদের প্রতিমাসে খরচ করতে হয় মাত্র ১০০ টাকা। 

বাজওয়ার এই উদ্যোগ যে কতটা প্রভাবিত করেছে উত্তর ভারতের ক্রীড়া পরিমণ্ডলকে, তা ফলাফলেই স্পষ্ট। অনূর্ধ্ব ১৮ দলের দেশের প্রথম ১০ স্কোয়াশ খেলোয়াড়ের অর্ধেকের বেশিই বাজওয়ার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ‘খেলশালা’-য় জাতীয় চ্যাম্পিয়নের তালিকাও বেশ দীর্ঘ। কেউ আবার এই প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকে পাশ করে শুরু করেছেন নতুন কোচিং সেন্টার। সবমিলিয়ে যেন ক্রীড়াক্ষেত্রে একটা পৃথক ইকোসিস্টেম গড়ে তুলেছেন তিনি। আগামীতে ভারতকে আন্তর্জাতিক সাফল্য এনে দেবে তাঁর এই প্রয়াস, তাতে সন্দেহ নেই কোনো… 

Powered by Froala Editor

More From Author See More