নতুন বছরের শুরুতেই বায়ুদূষণে দিল্লিকে পিছনে ফেলতে পারে কলকাতা!

দিল্লির বায়ুদূষণ নিয়ে নতুন করে বলার নেই কিছুই। প্রতিবছরই শীতের আগে আগে বিষিয়ে ওঠে দিল্লির বাতাস। এমনকি দূষণের জেরে সাময়িকভাবে স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় সরকারও। বায়ুদূষণের প্রেক্ষিতে দিল্লির থেকে কলকাতাকে (Kolkata) কম বিপজ্জনক হিসাবেই ধরে নেওয়া হত এতদিন। তবে এবার বদলে যেতে পারে এই সমীকরণ। সম্প্রতি এমনই ভয়াবহ পরিস্থিতির পূর্বাভাস ছিল পরিবেশবিদরা।

হ্যাঁ, নতুন বছর অর্থাৎ ২০২৩-এর শুরুতেই বায়ুদূষণে দিল্লিকেও ছাপিয়ে যাবে কলকাতা। এমনটাই অনুমান বিজ্ঞানীদের। শুধু কলকাতাই নয়, ভয়াবহ বায়ুদূষণের (Air Pollution) শিকার হবে রাজ্যের একাধিক জেলা। ডিসেম্বরের শেষ থেকেই কলকাতার বায়ুতে ক্রমশ বেড়ে চলেছে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড এবং পিএম ২.৫ কণার উপস্থিতি। এই দুই দূষকের মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধির হারের কারণেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন গবেষকরা। এমনকি এই দুটি দূষকের উপস্থিতি দিয়ে বিচার করলে আপাতত গোটা দেশের মধ্যে দিল্লির পরই রয়েছে কলকাতার নাম।

এইচইআই সোগা-র সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ১২ ডিসেম্বর এবং ১৩ ডিসেম্বর পর পর দু’দিন কলকাতার বায়ুর মান সূচক বা এয়ারকোয়ালিটি ইন্ডেক্স প্যারামিটার ছাপিয়ে যায় দিল্লির পরিসংখ্যানকে। দু’দিনই কলকাতার এয়ারকোয়ালিটি স্কোর ছিল ৩০০-র বেশি। যা ‘বিপজ্জনক’ বিভাগের মধ্যে পড়ে।

ফসলের অবশিষ্টাংশের দহনের কারণে বায়ুদূষণের মাত্রা শিখরে পৌঁছায় দিল্লিতে। আশ্চর্যের বিষয় হল, পশ্চিমবঙ্গের ছবিটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বরং, এক্ষেত্রে দূষণের জন্য গবেষকরা কাঠগড়ার দাঁড় করিয়েছেন কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যের একাধিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে। গবেষকদের মতে, সালফার-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন–ডাই-অক্সাইডের মতো দূষক মূলত তৈরি হয় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতেই। ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজেশন বা এফজিডি প্রযুক্তির ব্যবহারে উৎপাদিত গ্যাস পরিশ্রুত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও, এই প্রকল্পকে চালু করেনি রাজ্যের ৪০ শতাংশ তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা। এমনকি বাকি ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই সিস্টেম ইনস্টল করা হলেও, তা কাজ করে না সম্পূর্ণভাবে।

অন্যদিকে পরিবেশ দপ্তরের ঢিলেঢালা পদক্ষেপকেও দায়ী করেছেন পরিবেশবিদরা। প্রশাসনিক ব্যবস্থা কঠোর না করা হলে, কলকাতার পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে, সে ব্যাপারেই ইঙ্গিত দিচ্ছেন তাঁরা। পাশাপাশি অটোমোবাইলের জগতে ডিজেলচালিত যানের সংখ্যা সীমিত করার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে রাজ্যকে। জোর দিতে বলা হচ্ছে সিএনজি এবং ব্যাটারি চালিত যানবাহন ব্যবহারের। উল্লেখ্য, এই দূষণ নিয়ন্ত্রণে না এলে শুধু রাজ্যবাসীর স্বাস্থ্যই নয়, বরং পরোক্ষভাবে অর্থনৈতিক দিক থেকেই ধাক্কা খেতে পারে বাংলা— রয়ে যাচ্ছে সেই সম্ভাবনাও… 

Powered by Froala Editor