বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদনের মাধ্যমেই ধাপার দূষণ ঠেকাতে চলেছে কলকাতা

ধাপা ড্যাম্পিং গ্রাউন্ড (Dhapa Dumping Ground)। আশির দশক থেকেই ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছিল পূর্ব কলকাতার এই আবর্জনার পাহাড়ের আয়তন। তারপর কেটে গেছে প্রায় তিন শতকেরও বেশি সময়। দূষণ নিয়ন্ত্রণে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (National Green Tribunal) জারি করেছে একাধিক সুপারিশ। তবে ধাপার চেহারা বদলায়নি। এবার ধাপার পরিবেশেরকে স্বাভাবিক করে তুলতে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণে জ্বালানি অর্থাৎ বায়ো গ্যাস তৈরির প্রকল্প নিল কলকাতা।

অবশ্য এই খবর নতুন নয়। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই বর্জ্য বায়ো গ্যাস উৎপাদনের প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিল কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন। তবে ধাপার বর্জ্য পরিষ্কার এবং প্রক্রিয়াকরণের কাজ শুরু হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। লক্ষ্য, ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে ধাপার সমস্ত বর্জ্য সরিয়ে ফেলা। 

যদিও এই কাজ সহজ নয় মোটেই। এখনও পর্যন্ত মাত্র ২০ শতাংশ বর্জ্য বাছাই ও পরিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে প্রশাসন। হিসেব অনুযায়ী, আগামী দেড় বছরে প্রতিদিন প্রায় ৮০০০ টন বর্জ্য বাছাই ও প্রক্রিয়া করলে তবেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সমর্থ হবে কলকাতা প্রশাসন। অবশ্য ধাপার বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদনের এই প্রকল্প কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। 

গবেষণা অনুযায়ী, ধাপার বর্জ্যের পাহাড়ে প্রতি ১০০ কেজি বর্জ্যের মধ্যে ২৫-৩০ শতাংশ উপাদান অদাহ্য এবং ১০-১৫ শতাংশ দাহ্য বর্জ্য মিশে রয়েছে। এর বাইরে ১-২ শতাংশ বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের যোগ্য। অন্যদিকে ৫০ শতাংশ জৈব বর্জ্যের মধ্যে ২০-৩০ শতাংশ আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। ফলে সরকারের এই উদ্যোগ আর্থিক দিক থেকে কতটা লাভজনক হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। 

বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। গড়ে প্রতি ৫ মেট্রিক টন বর্জ্য থেকে ১৪০ কেজি গ্যাস তৈরি করতে সক্ষম এই সংস্থা। মূলত এই গ্যাস দিয়ে বর্তমানে চালনা করা হচ্ছে পৌরসভার বিভিন্ন ডাম্পারগুলিকে। তবে গণহারে এই গ্যাস ব্যবহারের জন্য এখনও কোনো পরিকল্পিত পরিকাঠামো নেই কলকাতায়। 

আদর্শ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট গ্যাস উৎপাদনকারী সাইট বায়োগ্যাস নিকটস্থ কারখানায় সরবরাহ করার পরামর্শ দেন গবেষকরা। তবে ধাপার আসেপাশে এমন কোনো কারখানা নেই, যেখানে বায়ো গ্যাসকে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা সম্ভব। ফলে, ওড়িশা এবং ছত্তিশগড়ে পাঠাতে হবে উৎপাদিত এই জ্বালানিকে। অর্থাৎ, অতিক্রম করতে হবে প্রায় ৩০০-৬০০ কিলোমিটার পথ। সেক্ষেত্রে বায়ো গ্যাসের ব্যবহার পরিবেশবান্ধব থাকবে না বলেই আশঙ্কা গবেষকরা। উল্টে এই দীর্ঘ পথ গ্যাস পরিবহনের জন্য বাড়বে কার্বন ফুটপ্রিন্ট। এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সমাধান খুঁজে বার করতে পারেনি কলকাতা মেট্রোপলিটন কর্পোরেশন। 

অবশ্য আর্থিকভাবে লাভজনক না-হলেও, কলকাতার এই প্রকল্পে সার্বিকভাবে চেহারা ফিরবে ধাপার। কমবে দূষণও। ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাঙ্কের সহায়তায় জিও-টেক্সটাইল মেমব্রেন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে ধাপার ১২ হেক্টর অঞ্চল। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বসানো হয়েছে ঘাস। বন্ধ হয়েছে ওই অঞ্চলে বর্জ্য ফেলার প্রক্রিয়াও। অন্যদিকে আরও ২৩ হেক্টর অঞ্চল বর্তমানে সক্রিয়। আগামী দেড় বছরে এই অঞ্চলটিকে পুনরুদ্ধার করাই প্রধান লক্ষ্য কলকাতা প্রশাসনের। 

Powered by Froala Editor