দৈনন্দিন কথাবার্তায় পটু, পারে রান্নাও – আমেরিকার এক আশ্চর্য শিম্পাঞ্জির গল্প

‘প্ল্যানেট অফ দ্য এপস’ সিনেমা সিরিজটি দেখেছেন নিশ্চয়ই! তাহলে তো সিজারকেও মনে থাকবে আপনার। একটি শিম্পাঞ্জি, যে তার প্রজাতির অন্যদের থেকে অনেক বুদ্ধিমান। এমন অনেক কিছুই ও অবলীলায় করতে পারে, যা সাধারণ শিম্পাঞ্জিরা পারে না। নিছক সিনেমার গল্প হিসেবে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছি সবাই। যদি সত্যিই বাস্তবের সিজার আমাদের সামনে চলে আসে?

তাই কখনও হয় নাকি! আজ্ঞে, গল্পও যে কখনও কখনও সত্যি হয়। এক্ষেত্রে কানজি’র জীবনেও এমনটি ঘটেছে। সে যে বাকিদের মতো নয়। রীতিমতো ভাষা বুঝতে পারে, আগুন জ্বালাতে পারে। এমনকি, টুকটাক রান্নাও করতে পারে। তাঁর বুদ্ধি দেখে সবাই রীতিমতো অবাক! অবশ্য, অবাক হওয়ার মতোই ঘটনা। কানজি যে বাস্তবের সেই ‘সিজার’; একটি বুদ্ধিমান বোনোবো এপ।

আরও পড়ুন
আগুনের হাত থেকে বাঁচাতে, অন্য প্রাণীদের নিজের বাসায় আশ্রয় দিল এই প্রাণী

অবশ্য তার জন্ম বনে নয়, হয়েছিল আমেরিকার একটি রিসার্চ ইন্সটিটিউশনে। পরবর্তীতে সেখান থেকেই তাকে আয়ওয়ার এপ কগনিশন অ্যান্ড কনজারভেশন ইনিশিয়েটিভে নিয়ে আসা হয়। পালিতা মা মাতাতা’র সঙ্গে সেখানেই বেড়ে ওঠা তার। আর সেই ছোট বয়সেই প্রকাশ পায় তার এমন ক্ষমতার। নিজে থেকেই ভাষা শিখে নিতে আরম্ভ করে ও। এর জন্য হাতিয়ার ছিল লেক্সিগ্রাম, যে বিশেষ কিবোর্ডের সাহায্যে মানুষ আর এপ সহজেই কথা বলতে পারে। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, কানজি-ই তাদের দেখা প্রথম এপ যে কিনা নিজে থেকেই লেক্সিগ্রাম শিখতে শুরু করে। আর অগ্রগতিও হয় খুব তাড়াতাড়ি। আর আজ? লেক্সিগ্রাম তো তার নখদর্পণে, এমনকি মানুষের গলাও মাঝে মাঝে নকল করতে পারে সে।

আরও পড়ুন
বিপন্ন ও ঘরছাড়া সামুদ্রিক প্রাণীদের ফিরিয়ে আনছেন মৎস্যজীবীরাই

পাঁচ বছর বয়স থেকেই শুকনো ডালপালা এক জায়গায় করে আগুন ধরাতেও পারত কানজি। শুধু আগুন ধরানোই নয়, রান্নাবান্নাতেও পটু ছিল ও। নিজেই রান্না করে নিত প্রিয় অমলেট। এমনকি গেম খেলতেও সিদ্ধহস্ত কানজি। তখন থেকেই রীতিমতো গবেষণার বিষয় হয়ে গেছে সে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ও টাইমসের কভারে দুইবার জায়গাও করে নিয়েছে। আজ, ৩৯ বছর বয়সে এসেও হারায়নি তার ক্ষমতা।

গোটা পৃথিবীতে বোনোবো প্রজাতির এপরা সংকটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। তাদের সংখ্যাও আজ সীমিত। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমেরিকার এই এপ রিসার্চ সেন্টার গবেষণা করে যাচ্ছে এদের নিয়ে। শুধু জীবচর্চাই নয়, প্রাচীন ইতিহাসকে আরও একবার ঝালিয়ে নেওয়ার গবেষণাই তাদের অন্যতম লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে অন্যতম বিস্ময় হয়ে এসেছে কানজি। আজ সে সবার কাছেই হয়ে উঠেছে ‘বুদ্ধিমান’ বন্ধু!