বিবর্ণ কংক্রিটের দেয়াল হয়ে উঠছে মুক্ত ক্যানভাস, ব্যতিক্রমী উদ্যোগ চেন্নাই-এ

এই তো কয়েক সপ্তাহ আগেও অন্যরকম চেহারা ছিল কাননাগি নগরের। সংবাদপত্রে এই এলাকার নাম উঠে আসত শুধু সমাজবিরোধী কার্যকলাপের জন্য। কাননাগি নগরকে ঘিরে থাকত দারিদ্র্য, অশিক্ষা। আর এরই মধ্যে বসন্ত এসেছে। আক্ষরিক অর্থেই বসন্তের রং এসে লেগেছে কাননাগি নগরে। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে বদলে গিয়েছে এখানকার চেহারা। শহরের দেয়ালজুড়ে এখন বিরাট বিরাট ছবি। রংবেরঙের সেসব ছবি যেন এখানকার মানুষের জীবনকেই তুলে ধরেছে। যেখানে বেঁচে থাকতে হয় প্রতিদিন ভাগ্যের সঙ্গে লড়াই করে। আর তার সঙ্গে আছে তীব্র জলকষ্ট। অথচ এই বিভীষিকাময় জীবনও রঙে রেখায় যেন অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে উঠেছে।

গল্পের শুরু এভাবে, চেন্নাইয়ের নিকটবর্তী এই অঞ্চলে হঠাৎ এসে পড়লেন একজন ট্রান্সজেন্ডার শিল্পী। তাঁর নাম নীলা। হাতে একটা মাইক। আর এখনকার মানুষদের কাছে শুনতে চাইলেন তাঁদের জীবনের গল্প। তারপর ফিরে গেলেন। কিন্তু আবার কিছুদিন পরে ফিরে এলেন। আবারও হাতে মাইক। আর এবার ঘোষণা করে দিলেন, তিনি একটা উৎসব নিয়ে এসেছেন। কাননাগি নগরের দেয়ালগুলো রাঙিয়ে তোলার উৎসব। নীলার সঙ্গে উপস্থিত দেশ বিদেশের অনেক শিল্পী। এঁরা প্রত্যেকেই 'স্টার্ট ইন্ডিয়া' নামের একটি সংগঠনের সদস্য। ভারতবর্ষের নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে তাঁরা বিবর্ণ দেয়ালগুলিকে রঙিন করে তোলেন।

নীলাদের 'অদ্ভুত' কাজকর্ম আকর্ষণ করেছে এলাকার মানুষদেরও। বিশেষ করে ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের। তাদের জীবনযাত্রার সঙ্গেও অতি দ্রুত মিশে গিয়েছেন বাইরে থেকে আসা এইসব শিল্পীরা। ছবি আঁকার কাজে যেমন এগিয়ে এসেছেন এলাকার অনেকেই, আবার শিল্পীরাও রংতুলি ফেলে রেখে ছোটোদের সঙ্গে নেমে পড়েছেন খেলার মাঠে। কখনও আবার খেলার ছলেই চলছে পড়াশোনা। এমনকি, সংসারের এক কোণে অবহেলিত মেয়েরাও যেন নতুন একটা জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করছেন। পর্দা সরিয়ে বেরিয়ে এসেছেন রূপান্তরকামী মানুষরাও। আর এইসব মিলিয়ে প্রকৃত অর্থেই উৎসবে মেতে উঠেছেন কাননাগি নগরের মানুষ।

তবে, এর মধ্যে সবাই যে খুব খুশি এমনটা নয়। ছোটোদের মধ্যে কোনো অন্য চিন্তা আসেনি। কিন্তু বয়স্ক অনেকেই ভাবছেন, হঠাৎ এঁদের আসার তো নিশ্চই কোনো কারণ আছে। নীলাদের আঁকা ছবি তাঁদের ভালো লাগছে। মাঝে মাঝে বসে ছবি আঁকার কাজও দেখছেন। কিন্তু সংসারের দারিদ্র্য আর লড়াই যে বেঁচে থাকার অনুভূতিটাই মেরে ফেলেছে। ভাবছেন, এসব করে তো তাঁদের দিন বদলাবে না কিছুই। দুটো পয়সার জন্য আবারও সেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হবে। অনেকে অবশ্য ভাবছেন, এইসব ছবি দেখতে মানুষ এখানে ভিড় করবেন। আর তার ফলে ব্যবসা বাড়বে দোকানগুলোর।

আসলে, কংক্রিটের বিবর্ণ দেয়ালগুলোর নিচেই চাপা পড়ে গিয়েছে তাঁদের জীবন। সেই বোঝা সরিয়ে কি নতুন জীবনের স্বাদ এনে দিতে পারবেন নীলারা? দেখাই যাক না, তাঁদের এই রঙিন উদ্যোগ কতটা সফল হয়। কাননাগি নগরের মানুষের জীবনে কতটা দাগ কাটতে পারেন তাঁরা…