তৈরি করা হবে বাঁধ, প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করে জঙ্গল কাটা হচ্ছে সুমাত্রায়

চারিদিকে সবুজ, ঘন জঙ্গল। মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে নদী। সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ। একটু ভুল হয়ে গেল বর্ণনায়। নদী আছে; কিন্তু সবুজের সন্ধান করতে গিয়ে একটু ঘাবড়ে যেতে হয়। নদীর একপাড়ে ঘন জঙ্গল, ওপর দিকে ছিটেফোঁটা গাছ ছড়িয়ে আছে। ধু ধু লাল মাটি, গাছের কোনো চিহ্নই নেই। বদলে ঘুরে বেড়াচ্ছে বুলডোজার। এমনই ছবি দেখা যাচ্ছে সুমাত্রায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও সেখানে তৈরি করা হচ্ছে বাঁধ। আর তার জন্যই সমস্ত বন-জঙ্গল কেটে ফেলা হচ্ছে।

২০১৭ সালে প্রশাসনের তরফ থেকেই এই বিশেষ প্রোজেক্ট শুরু করার কথা বলা হয়। ইন্দোনেশিয়া জুড়ে মোট ৬৫টি বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা করা হয় এখানে। এর মধ্যে উত্তর সুমাত্রায় দুটি বাঁধের কথা বলা হয়েছে। আর এই দুটিই করা হয়েছে জঙ্গল এলাকায়। লাও সিমেম বাঁধটি যেখানে করা হবে, তার চারিদিকে অন্তত পাঁচটি গ্রাম। সেখানে প্রায় ২৫০টি পরিবারের বাস। এদের অধিকাংশই কয়েক পুরুষ ধরে এখানে বসবাস করছে। এই বাঁধ তৈরি হলে বিস্তীর্ণ জমি লাগবে, তৈরি হবে রাস্তা। তখন এরা কোথায় যাবে? নিজেদের জমি রক্ষার জন্যই তাঁরা প্রতিবাদে নেমেছে।

এছাড়াও আরও একটি বাঁধ যেখানে করা হচ্ছে, সেই বাটাং তরু অঞ্চলে তাপানুলি ওরাংওটাংয়ের মতো বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির বাস। এই সবকিছু শেষ হয়ে যাবে যদি বাঁধদুটি করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা তো বটেই, পরিবেশকর্মীরাও এই প্রকল্প বন্ধ করার পক্ষে। কিন্তু প্রশাসন তাঁদের অবস্থানে অনড়। তাঁদের বক্তব্য, এতে গ্রামবাসীদের উপকারই হবে। সেখানে পর্যাপ্ত জল ও বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। কিন্তু জমিই যদি না থাকে, তাহলে আর কী হবে! এরই মধ্যে জঙ্গল কেটে রাস্তা তৈরিও শুরু করা হয়েছে। লাও সিমেম প্রোজেক্ট যেখানে হচ্ছে, সেখানে নদীর এক পাশের গাছপালা প্রায় সব উধাও। শুধু রুক্ষ মাটি দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে হড়কা বানে সেখানে কয়েকজন মারাও গেছে। তবুও প্রোজেক্ট চালিয়ে যেতে হবে।

এভাবেই পরিবেশ বারবার ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছে। সামনে চলে আসছে টাকা, মুনাফার লোভ। যদি জঙ্গলই না থাকে, যদি গ্রামগুলোই আর আস্ত না থাকে, সেখানকার প্রাণীগুলোই যদি মারা যায়; তাহলে কীসের উন্নয়ন? শুধু সুমাত্রা বা ইন্দোনেশিয়া নয়, বিশ্বের অনেক জায়গাতেই এমন কাজ চলছে। আখেরে কার ক্ষতি করছি আমরা? ভেবে দেখা কি উচিত নয়? অবশ্য তার সময়ই বা কোথায়…