দুজন মিলে তৈরি করলেন ইনফোসিস, তবু দাম্পত্যে ব্যবসার আঁচড় পড়তে দেননি এই দম্পতি

বলা হয়, যে কোনো সফল পুরুষের পিছনে একজন নারীর অবদান থেকে যায়। একসময় লিঙ্গবৈষম্যের প্রশ্ন তুলে ইন্টারভিউতে সফল হয়েছিলেন যে নারী তিনি আর কেউ নন, সুধা মূর্তি। নামটা একটু অচেনা লাগলেও 'ইনফোসিস' নামটির সঙ্গে কমবেশি সবাই পরিচিত। ভারতবর্ষের তথা বিশ্বের প্রথম সারির একটি মাল্টি ন্যাশানাল কোম্পানি এই ইনফোসিস বা সংক্ষেপে ইনফি।

ইনফোসিসের মালিক ছিলেন নারায়ণ মূর্তি। আর তাঁর এই কোম্পানি গড়ে তোলার সময় পাশে পেয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী সুধাকে। প্রথম জীবনে ডেভলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার পদে 'টেলকো'-তে চাকরি করা কালীন নারায়ণ মূর্তি নামের এক লেখকের বই সুধার চোখে পড়ে। বইপাগল সুধা আলাপ করেন সেই লেখকের সঙ্গে। দুজনের পড়াশোনার বিষয়ে প্রচুর মিল হওয়ায় আলাপ ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয়। স্বভাবে লাজুক ও শান্ত হলেও নারায়ণ মূর্তি-ই এরপর সুধাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। কিন্তু সহজ ছিল না তাদের বিয়ে করা, পারিবারিক কিছু জটিলতার কারণে অপেক্ষা করতে হয়েছিল বেশ কিছুদিন। শোনা যায়, নারায়ণ মূর্তি, সুধার বাবাকে জানিয়েছিলেন যে, তিনি পরবর্তী জীবনে একজন কমিউনিস্ট নেতা হতে চান।

নারায়ণ তুলনামূলক কম মাইনের চাকরি করতেন বলে রেস্তোরাঁর বিলের টাকা মেটাতেন সুধাই। অথচ এ নিয়ে আক্ষেপ করেননি তিনি কখনও। ১৯৭৮ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি বিয়ে সম্পন্ন হবার তিন বছর পর নারায়ণ ব্যবসা করবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ততদিনে তাঁদের দুটি সন্তান হয়েছে, সংসার হয়েছে আগের থেকে অনেক স্বচ্ছল। প্রায় তিনবছর পর তাঁরা শুরু করলেন 'ইনফোসিস' নামের একটি কোম্পানি।

কথায় বলে যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে। দুই সন্তানকে সামলানোর পাশাপাশি ইনফোসিসে স্বামীর সেক্রেটারি ছিলেন সুধাই। প্রোগামিং করাই শুধু নয়, তিনি অফিসে রান্নাবান্নাও করতেন বলে শোনা যায়। কিন্তু স্বামীর স্বপ্নকে সফল করতে কয়েক বছর পর সুধা ইনফোসিস থেকে সরে দাঁড়ান। এ নিয়ে সুধার কোনো আক্ষেপ নেই, এমনই ছিল তাঁর স্বামীর প্রতি ভালোবাসা। তিনি নিজেকে ইনফোসিস এর সমাজসেবার বিস্তৃত শাখায় নিযুক্ত রেখেছেন। খুশি মনেই সুধা জনস্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্ত করেছেন নিজেকে। বলতে গেলে, এই বিভাগের পুরোধা এখন তিনি-ই।

বিস্তর পড়াশোনার পাশাপাশি বেশ কিছু বই লিখেছেন সুধা। একটি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ইনফোসিস তৈরি করেছে প্রায় ৭০০০০ পাঠাগার। স্বামী বিরাট মাপের শিল্পপতি হওয়া সত্ত্বেও জীবনে খুব বেশি আড়ম্বর নেই সুধার। বরং বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে নিজের স্বাধীনতাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।

খুব সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার এরূপ ঘটনা হয়ত খুঁজে পেলে অনেক পাওয়া যাবে৷ কিন্তু তাদের একে অপরকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার এমন কাহিনি বিরল বললেও কম বলা হয়। সফলতার পেছনে মেধার পাশাপাশি চাবিকাঠি ছিল তাঁদের এই বন্ধুত্ব, ভালোবাসার গল্পগুলো।