ভারতের প্রথম মস সংরক্ষণ ও প্রদর্শনীর বাগান তৈরি নৈনিতালে

সাধারণ মানুষের চোখে তারা পরিগণিত হয় আগাছা হিসাবেই। হ্যাঁ, মস। এবার নৈনিতালের খুরপাতাল জেলায় গড়ে উঠল মসের বাগান। উল্লেখ্য ভারতে এই ধরণের বাগান এই প্রথম। উত্তরাখণ্ড বনদপ্তরের রিসার্চ অ্যাডভাইসারি কমিটির উদ্যোগেই বাস্তবায়িত হল পরিকল্পনাটি। গত শুক্রবার বন বিভাগের চিফ কনসার্ভেটর সঞ্জীব চতুর্বেদী ও সক্রিয় পরিবেশকর্মী রাজেন্দ্র সিং উদ্বোধন করলেন এই নয়া বাগানের।

তবে শুধু মস নয়। এই বাগানে সংরক্ষণ করা হচ্ছে অন্যান্য ব্রায়োফাইট গোত্রের উদ্ভিদকেও। সব মিলিয়ে এখনও অবধি রয়েছে ৩০টি মসের প্রজাতি এবং আরও বেশ কয়েকটি ব্রায়োফাইট প্রজাতি। যার মধ্যে সিমেন্ট মস এবং ব্রাকাইথেসিয়াম নামের দুটি প্রজাতি ইতিমধ্যেই রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির তালিকায়। সব মিলিয়ে বাগানের প্রদর্শনীর দৈর্ঘ্য প্রায় ১.২ কিলোমিটার। প্রতিটি প্রজাতির সঙ্গেই রয়েছে তাদের বৈজ্ঞানিক নাম এবং বিবরণ।

তবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্লভ মস প্রজাতির যে শুধুমাত্র সংরক্ষণ হচ্ছে, তা নয়। সেই সঙ্গে গড়ে উঠবে পর্যটন শিল্প এবং মসের কার্যকারিতা ও ভূমিকার বিষয়েও সচেতন করা যাবে মানুষকে। সে ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী সঞ্জীব চতুর্বেদী। আর মূলত মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যেই সংগ্রহশালায় দেখানো হয়েছে মসের একাধিক ব্যবহারিক উদাহরণ। 

দেখানো হয়েছে বিশ্বযুদ্ধে স্ফ্যাগাম প্রজাতির মসের মাধ্যমে চলত চিকিৎসা। যা গজ কাপড়ের থেকে তিনগুণ রক্তকে শোষণ করতে পারে। পাশাপাশি রয়েছে তার অ্যান্টিসেপটিক গুণাবলিও। অন্যদিকে বাসার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সুরক্ষা পাওয়ার জন্য পাখিও ব্যবহার করে মসের। এমনকি জাপানে মহিলাদের গহনা তৈরিতেও ব্যবহৃত হয় জীবন্ত মস। সেসব উদাহরণই ছড়িয়ে ছিটিয়ে তুলে ধরা হয়েছে গোটা বাগানজুড়ে।

পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া একদম শুরুর প্রজাতিগুলির মধ্যে অন্যতম এই মসই। তাদের অনুপস্থিতিতে কার্যত অসম্ভব ছিল অন্যান্য উদ্ভিদ প্রজাতির আত্মপ্রকাশ। কারণ জুরাসিক যুগেরও আগে থেকে শক্ত আগ্নেয় শিলাকে ক্রমাগত ভেঙেছে মস। করে তুলেছে নমনীয়, ভঙ্গুর। যে পরিবেশ অন্য যে কোনো উদ্ভিদ গোত্রের বিকাশের জন্য অত্যন্ত জরুরী। অথচ জীবজগতের এই ‘পায়োনিয়ার’-রাই হারিয়ে যেতে বসেছে কালের আবহে। উত্তরাখণ্ডের এই অভিনব উদ্যোগ তাদের অস্তিত্বকেই যেন টিকিয়ে রাখার এক অন্তিম প্রচেষ্টা...

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ভারতের প্রথম ডাকঘর মেদিনীপুরের খেজুরিতে, সংরক্ষণের অভাবে ধুঁকছে ইতিহাস