৩৭ বছরে এই প্রথম, এপ্রিলে ভারতে কার্বন নিঃসরণের হার সর্বনিম্ন

করোনা ভাইরাসের মহামারীতে থমকে গেছে দৈনন্দিনের যাপনচিত্র। বন্ধ রয়েছে দেশের বেশিরভাগ কলকারখানাই। কমেছে দূষণের হারও। তবে ‘কার্বন ব্রিফ’ সংস্থার সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণাপত্র বিস্মিত করেছে সকলকে। ভারতে কার্বন নিঃসরণের চিত্ররেখা নিম্নমুখী। দূষণের হার এত বেশি কমতে দেখা যায়নি গত ৩৭ বছরে।

ওই সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে গত বছর থেকেই ভারতে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমতে শুরু করে কার্বন নিঃসরণ। মার্চের শুরুতে গত বছরের তুলনায় কার্বন নিঃসরণ হ্রাস পায় ১৫%। কিন্তু নাটকীয়ভাবে এই হারের পরিবর্তন হয় এপ্রিল মাসে। নিঃসরণের মাত্রা কমে আসে ৩০ শতাংশে। ভারত তাপবিদ্যুতের বদলে নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহারের দিকে ঝুঁকেছিল গত বছর থেকেই। তার জন্যই এই ফলাফল এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে লকডাউনের পর এপ্রিলের প্রথম তিন সপ্তাহে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে উৎপাদনের হার কমেছে ৩১ শতাংশ। সেই সঙ্গে চাহিদা কমেছে পেট্রোলিয়াম তেলেরও। দেখা যাচ্ছে, লকডাউনে সৌরবিদ্যুৎসহ অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহারও বেড়েছে দেশে।

তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, এই নিম্নমুখী গ্রাফ স্থায়ী নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে সরকারকেই ভূমিকা নিতে হবে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার জন্য। ইতিমধ্যেই অর্থনীতি সচল করতে যুক্তরাষ্ট্রে চালু হয়েছে কারখানাগুলি। শিথিল হয়েছে লকডাউনের নিয়মাবলি। ভারতসহ অন্যান্য দেশও সম্ভবত অনুসরণ করতে পারে এই মডেলকে। লকডাউনের পরে তখন হঠাৎ বাড়তে পারে দূষণের মাণ।

ওই সংস্থা উপদেশ দিয়েছে ভারতকে নবীকরণযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য। কারণ তাতে দূষণ হ্রাসের পাশাপাশি কমবে শক্তি উৎপাদনের খরচও। রিপোর্ট অনুযায়ী, তাপশক্তি উৎপাদনে যেখানে ইউনিট পিছু ৩.৩৮ টাকা খরচ হয়, সৌর বা বায়ুশক্তির ব্যবহারে তা কমে আসতে পারে মাত্র ২.৫৫ টাকায়। পাশাপাশি ২০১৯-এ ঘোষিত ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রামকেও সফল করতে পারে এই শক্তির ব্যবহার।

লকডাউনে আশ্চর্যরকম ভাবে সেরে উঠেছে পরিবেশ। উন্নত হয়েছে বায়ুর মাণও। গত ৩৭ বছরের ইতিহাসে যা প্রথমবার। লকডাউনের পরেও এই প্রবণতাকে ধরে রাখতে পারবে দেশ, এ ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী দেশের পরিবেশবিদরা। তবে পরবর্তীকালে পরিস্থিতি কোনদিকে এগোবে, একমাত্র সময়ই বলতে পারে সেই কথা…