বছর দুয়েক আগের কথা। কিংবদন্তি জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিল টাইসন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, আগামীদিনে মহাকাশই হয়ে উঠতে চলেছে মানুষের সবচেয়ে বড়ো খনিজের উৎস। টাইসনের এই ভবিষ্যদ্বাণীকে বাস্তবায়িত করতে ইঁদুর দৌড়ে নেমেছিল প্ল্যানেটারি রিসোর্সের এবং ডিপ স্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের মতো স্পেস মাইনিং সংস্থাগুলি। এখনও পর্যন্ত সাফল্য না মিললেও গোটা বিশ্বজুড়ে বর্তমানে হট টপিক হয়ে উঠেছে ‘স্পেস মাইনিং’ (Space Mining)। কিন্তু এই স্পেস মাইনিং আদতে কী?
২০২১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ডোন্ট লুক আপ’ সিনেমাটির কথা মনে আছে? পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে প্রকাণ্ড একটি গ্রহাণুতে লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন মূল্যবান ধাতুর সন্ধান পেয়েছিলেন গবেষকরা। সেই ধাতু নিষ্কাশন করে পৃথিবীতে নিয়ে আসার জন্য তৈরি করা হয়েছিল বিশেষ স্বনিয়ন্ত্রিত মহাকাশযান। এই বিষয়টিকেই বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় স্পেস মাইনিং। কিন্তু বাস্তবে সত্যিই কি সম্ভব হয়েছে এমনটা?
হ্যাঁ, গ্রহাণু থেকে পাথরের নমুনা সংগ্রহ করেছে নাসার মহাকাশযান। তবে মহাকাশ থেকে বাণিজ্যিকভাবে খনিজ সংগ্রহ এখনও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এমনকি ধীরে ধীরে স্পেস মাইনিং-এর দিক থেকে পিছু হটছে প্ল্যানেটারি রিসোর্সের ও ডিপ স্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের মতো সংস্থাও। এমন ঘটনার কারণ কী? তবে কি ডিপ স্পেস মাইনিং আদতে লাভজনক নয়?
না, বিষয়টা তেমন নয়। আসলে স্পেস মাইনিং দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগ। যার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ গবেষণা এবং পরীক্ষার। এই দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে নারাজ বর্তমান পৃথিবীর বিলিয়নেয়ার বিনিয়োগকারীরা। সম্পূর্ণ আকারের গ্রহাণু খননকারী যান তৈরি করতেই খরচ হওয়ার কথা কয়েকশো মিলিয়ন ডলার। ফলে কোটি টাকার খনিজ মিললেও, তাতে লাভের পরিমাণ হবে সামান্যই। আর সেই কারণেই ক্রমশ পিছু হটছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে কি অধরাই থেকে যাবে ‘স্পেস মাইনিং’?
গবেষকদের অভিমত, প্ল্যাটিনাম কিংবা জার্মেনিয়ামের মতো বিরল ধাতুর পরিমাণ পৃথিবীতে সীমিত। একটা সময় পরে পৃথিবী থেকে এই ধরনের খনিজের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে সম্পূর্ণভাবে। তবে বাধ্যতামূলকভাবেই মানুষকে এইসকল খনিজের সন্ধান করতে হবে বহির্জগতে। অর্থাৎ, মানব সভ্যতা এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে স্পেস মাইনিং এককথায় অনিবার্য। তবে তার জন্য কমিয়ে আনতে হবে স্পেস মাইনিং-এর খরচ। বর্তমানে সেই বিষয়টিতেই গবেষণা চালাচ্ছেন তাবড় বিজ্ঞানীরা। আগামী ৫-৭ বছরের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে গ্রহাণু অভিযান শুরু হতে পারে বলেই আশাবাদী তাঁরা। এখন দেখার ভবিষ্যতে পৃথিবীর অর্থনীতি এবং বাণিজ্যকে আদৌ বদলে দিতে পারে কিনা এই গবেষণা…
Powered by Froala Editor