শহর শুনশান। দেশের অধিকাংশ রাস্তাই ফাঁকা পড়ে আছে। ঘর থেকে কেউই বের হয়নি। মাঝেমধ্যে শোনা যাচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ। এমনই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে ইতালির প্রতিটা জায়গায়। রোমের রাস্তা প্রায় জনশূন্য। কিন্তু মানুষজন, গাড়িঘোড়া না থাকলেও, সেখানে ফিরে আসছে কিছু প্রাণী। পশুপাখিরা আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। হঠাৎ এমন সময় এরকম ঘটনা?
আরও পড়ুন
ঘরের খোঁজে ৩৭ হাজার কিমি পাড়ি সমুদ্রে, অনন্য নজির কচ্ছপের
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনের শেষে কোথাও হয়তো শাপে বর হয়েছে পরিবেশের। রাস্তায় মানুষ এবং বিশেষ করে যানবাহনের সংখ্যা অনেকটা কমে আসায় বায়ুদূষণের পরিমাণ কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। ইতালিতে মহামারীর আকারে করোনা ছড়িয়ে পড়ায় আপাতত লকডাউনের ঘোষণা করেছে প্রশাসন। সেজন্য কারখানাও বন্ধ। আর এসবেরই ‘সুপ্রভাব’ পড়েছে পরিবেশে। ইউরোপিয়ন স্পেস এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, এই কদিনে ইতালির বাতাসে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের মতো দূষিত গ্যাসের পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমেছে।
আরও পড়ুন
প্লাস্টিক খেয়ে হজম করে ফেলে শুঁয়োপোকা, পরিবেশ রক্ষায় নয়া আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের
আবহাওয়ার এই আকস্মিক উন্নতি প্রাণ ফিরিয়েছে ওখানে। মানুষ না থাকলেও, বিভিন্ন পাখিরা ফিরে আসছে দেশের নানা প্রান্তে। সবচেয়ে বড়ো কথা, ভেনিসের জলে ঘুরতে দেখা গেছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছদের। এমনকি, দেখা গেছে ডলফিনও। যে ভেনিস ক্যানালে নৌকা আর পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকত, সেখানেই ঘুরে বেড়াচ্ছে রাজহাঁস। মহানন্দে খেলা করছে তারা। এভাবেই গোটা ইতালিতে প্রাণীরা মেতে উঠেছে।
আরও পড়ুন
বন্ধুত্বে বাধা নয় দূরত্ব – চেন্নাইয়ের কাছিম ও এক প্রবাসী ভারতীয়ের সম্পর্কের গল্প
উল্টোদিকে, করোনার জন্য পরিস্থিতি ভয়াবহ সেখানে। এখনও অবধি ৩১ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এই রোগে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ইতালির। এই মৃত্যুমিছিলেও নতুন করে ফুটে উঠছে পরিবেশ। এর আগে চিনেও দেখা গেছে, লকডাউন হওয়ার পর আবহাওয়া ক্রমশ ভালোর দিকে যাচ্ছে। ইতালিতেও তার অন্যথা হল না। এখান থেকে শিক্ষা নিতে পারি না আমরা? নিজেরা যদি একটু সামলে চলি, পরিবেশের দিকে খেয়াল রাখি, দূষিত না করি; তাহলে সবাই মিলে এভাবেই বাঁচতে পারব। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কী হবে, সেটা বলা যাচ্ছে না। আপাতত, এই মৃত্যুর হাহাকারের মধ্যেও পরিবেশের এই ভালো দিকটির দিকেই তাকিয়ে আছে মানুষ…