ইংল্যান্ডের বৃহত্তম সমুদ্র-ড্রাগনের জীবাশ্ম হ্রদের নিচে

আজ থেকে প্রায় ৬ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়াত ডাইনোসরের দল। তবে শুধু যে স্থলভাগে, তা নয়। জলভাগেও সমান দাপট ছিল এই সরীসৃপদের। তাদের চেহারাও ছিল ভয়ঙ্কর। জলচর ডাইনোসরদের অনেকে তাই সমুদ্র-ড্রাগনও বলে থাকেন। তবে জলচর ডাইনোসরদের জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে খুবই কম। সম্প্রতি তেমনই এক জীবাশ্মের সন্ধান পেলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। ইংল্যান্ডের লেগুন হ্রদ রুটল্যান্ডের নিচে চাপা পড়ে ছিল সেই জীবাশ্ম। দৈর্ঘ্যে যা প্রায় ১০ মিটার। এখনও পর্যন্ত ইংল্যান্ডের (England) মাটিতে সন্ধান পাওয়া সবচেয়ে বড়ো সমুদ্র-ড্রাগনের জীবাশ্ম এটি। তাছাড়া এই প্রথম ইংল্যান্ডের মাটিতে কোনো সম্পূর্ণ সমুদ্র-ড্রাগনের (Sea Dragon) অস্থির জীবাশ্ম আবিষ্কার করলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।

বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় প্রজাতিটির নাম ইকথিওসোর। প্রায় ২৫ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে এই প্রাণীটির আবির্ভাব ঘটে। সমুদ্র জগতে তখন একচেটিয়া দাপট ছিল ইকথিওসোরের। আর চেহারাও ছিল তেমন। জন্মের সময়েই প্রায় ১ মিটার দৈর্ঘ্য হত এই সরীসৃপের। পরিণত বয়সে কখনও কখনও ২৫ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যও হত। রুটল্যান্ড হ্রদে যে জীবাশ্মটি পাওয়া গিয়েছে, তার বয়স প্রায় ১৮ কোটি বছর। অবশ্য রুটল্যান্ড হ্রদের কাছে এই প্রথম ইকথিওসোরের জীবাশ্ম পাওয়া গেল, এমন নয়। ১৯৭০ সাল নাগাদ যখন এই হ্রদ খনন করা হয়, তখনই একসঙ্গে দুটি ইকথিওসোরের জীবাশ্ম আবিষ্কার হয় সেখান থেকে। তবে সেগুলো ছিল জীবাশ্মের খণ্ডাংশ। এক্ষেত্রে প্রায় সম্পূর্ণ জীবাশ্মটিই অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা গিয়েছে।

গতবছর ফেব্রুয়ারি মাসে হ্রদে তদারকি চালাতে গিয়ে প্রথন একটি কঙ্কালের হদিশ পান রুটল্যান্ড ওয়াটার কনজারভেশন সংস্থার টিম লিডার জো ডেভিস। সঙ্গে ছিলেন রিজার্ভ অফিসার পল ট্রেভর। ডেভিস প্রথমে ভেবেছিলেন কোনো মৃত ডলফিনের কঙ্কাল। কিন্তু কাছে যেতেই ভুল ভাঙে। এরপর এই জীবাশ্ম উদ্ধারের জন্য ইংল্যান্ডের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিকদের নিয়ে গড়ে ওঠে একটি কমিটি। আগস্ট মাস থেকে শুরু হয় খননকার্য। সেপ্টেম্বরের মধ্যে জীবাশ্মটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়। শুধু ল্যাজের শেষ মিটারখানেক অংশ পাওয়া যায়নি। বাকি গোটা কঙ্কালটিই রয়েছে অক্ষত অবস্থায়। সম্প্রতি জীবাশ্মটি নিয়ে প্রাথমিক গবেষণার কাজ শেষ করে রুটল্যান্ড কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন গবেষকরা। প্রায় ২০০ বছর আগে ইংল্যান্ডেই প্রথম পাওয়া গিয়েছিল ইকথিওসোরের জীবাশ্ম। আর এবার সেই ইতিহাস চর্চায় আবারও গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের সাক্ষী থাকল সেই ইংল্যান্ড।

Powered by Froala Editor