শাঁখ, উলুধ্বনি, বাজিতে উত্তাল গোটা দেশ, করোনার সঙ্গে দীর্ঘযুদ্ধের প্রস্তুতি?

সন্ধে ৫টা বাজতে না বাজতেই যেন জেগে উঠল গোটা মহল্লা। শাঁখ, উলুধ্বনি, কাঁসর। কেউ ছাদে উঠে বাজাচ্ছেন, কেউ বা নেমে এসেছেন উঠোনে। প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করেছিলেন, ভয়াবহ করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে যেন ১৪ ঘণ্টার ‘জনতার কার্ফু’ পালন করেন সবাই। সেই সঙ্গে বলেছিলেন, এরই মধ্যে যাঁরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে নানাবিধ পরিষেবা পৌঁছে দিচ্ছেন আজ সন্ধে ৫টার সময় সবাই মিলে যেন হাততালি দিয়ে কিংবা ঘণ্টা বাজিয়ে তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানান। বাস্তব চিত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ ব্যর্থ হয়নি।

আরও পড়ুন
আগামীকাল বিকেল থেকে লকডাউন কলকাতা, সঙ্গে অন্যান্য পৌরসভাগুলিও

কিন্তু, নিছক প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ রাখতেই কি এমনভাবে উত্তাল হয়ে উঠলেন এই রাজ্য-সহ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ! নাকি, করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচার যুদ্ধে এও একধরণের মানসিক রসদ সংগ্রহ? দক্ষিণ দমদমের যে অঞ্চলে সম্প্রতি এক করোনা-আক্রান্তর হদিশ মিলেছে, সেখানকারই এক পুরোনো বাসিন্দা কৌশিক বসু বলছিলেন, “সামনে দীর্ঘ লড়াই। করোনা ছড়ালে কী হবে জানা নেই। যদি তার আগে সবাই মিলে একটু এভাবেই মানসিক শক্তি-সঞ্চয় করা যায়, তাহলে মন্দ কি? এর মধ্যে রাজনীতি খোঁজার প্রয়োজন নেই।” তাঁর কথায় সায় দিলেন পাশে দাঁড়ানো প্রতিবেশীরাও। কিন্তু এই যে একসঙ্গে জড়ো হয়ে শাঁখ, উলুধ্বনি দেওয়ার সময়েও তো করোনা ছড়াতে পারে? একজন অবাঙালি মহিলার চটজলদি উত্তর, “এই আওয়াজে করোনা পালাবে।”

আরও পড়ুন
শুধু সাধারণ নাগরিকই নন, নিয়ম ভাঙছেন বিদেশ-ফেরত ডাক্তাররাও, সচেতনতার ঘাটতি সর্বত্র

সেই কারণেই হয়তো শাঁখ, উলুধ্বনি বা হাততালির সঙ্গে মিশে গেছে দেদার বাজির শব্দ। কীভাবে এই করোনা-আতঙ্কের মধ্যেই সেইসব বাজি কিনে জড়ো করা হয়েছিল বিভিন্ন আবাসনে ও বাড়িতে, তা নিয়ে বিস্মিত অনেকেই। করোনাকে কেন্দ্র করে আতঙ্ক বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে গুজবও। রাজ্য সরকার সোমবার সন্ধে থেকে সবাইকে ঘরবন্দি থাকার নির্দেশ দিয়েছে। এই আতঙ্কের পরিবেশেই দীর্ঘ লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাজ্যবাসী। সেই লড়াইয়ের ভিতরেই জুড়ে যাচ্ছে সরল বা অন্ধ বিশ্বাস কিংবা নিজেদের উদ্বুদ্ধ করার নানা প্রস্তুতি। আজকের সন্ধে হয়তো সেই জটিল বাস্তবতাকেই সামনে নিয়ে এল।

More From Author See More

Latest News See More