বড়ো চাকরি ছেড়ে ক্রিকেট, ভালোবাসেন গিটার ও সুমনের গান, অনুষ্টুপের জীবন তাঁর ব্যাটিং-এর মতোই ধ্রুপদী

একজন শিল্পীকে কেমন দেখতে হয়? উস্কোখুস্কো, শরীরজুড়ে খামখেয়াল। ভাবজগতে এই রয়েছেন, এই নেই। সৃষ্টির নেশায় বুঁদ। আর শিল্পী যদি ব্যাট ধরে খেলতে নামেন? তাহলে?

১৩ বছর পর, রঞ্জি ফাইনালে বাংলা। হ্যাঁ কর্ণাটককে, উড়িষ্যাকে হারিয়ে বাংলা। কান পাতলে একটা নাম ভেসে আসছে বাতাসে। অনুষ্টুপ। অনুষ্টুপ মজুমদার।

আরও পড়ুন
অনুষ্টুপ-ঈশানের গড়া ভিতে আগুন ঝরালেন মুকেশ, ১৩ বছর পর রঞ্জি ফাইনালে বাংলা

ঋতম কুণ্ডুর সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছিল। অনুষ্টুপের বন্ধু, এবং প্রাক্তন রঞ্জি স্পিনার ঋতম বলছিলেন, "…তারপর চাকরিটা ছেড়ে দিল রুকু। অত ভালো সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের চাকরি। শিওর প্রমোশন হত। আমায় বলেছিল, কালু চাকরি দরকার নেই। আগে খেলতে চাই…”

আরও পড়ুন
অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ফাইনাল আজ, চিনে নিন ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদের

কবীর সুমনের অসম্ভব বড়ো ভক্ত তিনি। সুমনের একটি কনসার্টও মিস করেন না। এমনকি, অবসর সময়েও তাঁর আশ্রয় হয়ে ওঠে সুমনের গানই। তাই কি ব্যাট তাঁর হাতে ঝলসে ওঠে গিটারের মতো? বলে উঠতে পারেন ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু…’?

আরও পড়ুন
৮ বছর বয়সে হাত খুইয়েও ছাড়েননি খেলা, রাজ্যের অধিনায়কও হয়েছেন এই ক্রিকেটার

ক্রিকেট ব্যাপারটা বড্ডো সহজ তাঁর কাছে। সহজাত। কেমন এক অদ্ভুত আলস্য রয়েছে খেলায়। রানমেশিন হবার ইচ্ছে নেই। টাচ-প্লেয়ার অনুষ্টুপ। যেন ফিরে দেখা ধ্রুপদী ঘরানাকে। সাদাকালো-ফ্ল্যাশব্যাক। সবুজ পিচে অসম্ভব গতিতে সুইং কাটছে বল। বাউন্স নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। কর্ণাটকের আগুনে পেসারদের সামনে হিমশিম খাচ্ছেন বাংলার টপ অর্ডার। সেখানে অবলীলায় তাঁর ব্যাট থেকে ড্রাইভ-গ্লান্স-হুক। ফ্রন্টফুটে এগিয়ে মোচড়। অফ স্টাম্পে শর্ট অফ দ্য গুড লেংথে বলকে অন দ্য রাইজ কভারের উপর দিয়ে মারা ছয়। মার্ক ওয়-কে মনে করিয়ে দেওয়া ব্যাটিং।

আরও পড়ুন
কোনো ক্রিকেটার নন, সেবার মাঠকর্মীরাই পেয়েছিলেন ‘ম্যান অব দ্য মাচ’ পুরস্কার

একের পর এক টেকনিক। রিচার্ডস-এর 'সোয়াগার' নিয়ে খেলছেন বাংলার ছেলে। বাংলার ব্যাটে ক্যারিবিয়ান ক্যালিপসো।

ষাটের কোঠা থেকে রান পৌঁছে যাচ্ছে ৩১২-য়। তিনি অপরাজিত ১৪৯।

আরও পড়ুন
মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলেন যুবরাজ, ক্রিকেটের সঙ্গে শেখালেন জীবনেরও পাঠ

চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন অনুষ্টুপ। তাই তো টেল-এন্ডারদের সঙ্গে নিয়ে হারা ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারেন। হঠাৎ ফেলে দিতে পারেন একের পর এক উইকেট। স্লিপ-গালিতে তুলতে পারেন অবিশ্বাস্য ক্যাচ। অমরত্বের প্রত্যাশা নেই, তাই স্কোরকার্ড-এর ভালো ছেলে তিনি নন। এই নিয়ে চিরকালীন ক্ষোভ, আমাদের। বাংলার সমর্থকদের। টিম খারাপ সিচুয়েশনে পড়লেই দেখতে পাওয়া যায় তাঁর ঝলক। তাই দীর্ঘদিন পরেও ভারতীয় জার্সি গলাতে হয়তো… থাক সে-কথা।

আরও পড়ুন
সুপারম্যান ‘ঋদ্ধি’, নামাজের আলো থেকে সৌরভ-ম্যাজিক – ক্রিকেটের নন্দনকানন আছে নন্দনকাননেই

বাংলা ফাইনালে। তবে এর মধ্যেই লেখা হয়ে গেছে ইতিহাস। রঞ্জি-আর্কাইভে শাহবাজ-ঈশানের পাশাপাশি থাকবেন অজাতশত্রু, অপরাজেয় অনুষ্টুপ মজুমদার।