ধ্বংস হয়েছিল বিমানহানায়, এক বছর পর খুলল গাজার খ্যাতনামা মনসুর বুকস্টোর

নিজের কেবিনে বসেই হিসেবনিকেশের কাজ করছিলেন সামির মনসুর (Samir Mansour)। হঠাৎ করেই বেজে উঠেছিল সাইরেন। আর তার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই যেন দুলে উঠেছিল মনসুরের গোটা পৃথিবীটাই। সেই সঙ্গে প্রচণ্ড আওয়াজ। নিজেকে খানিক সামলে যখন রাস্তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি, তখন সব শেষ। গাজার (Gaza) ইউনিভার্সিটি স্ট্রিট (University Street) জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য পুড়ে যাওয়া বই। প্রায় ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে তাঁর দোকানের মূল অংশটি। আগুন জ্বলছে বইয়ের তাকে। নিজের প্রাণ বাঁচাতে সেদিন সেটুকুও উদ্ধার করতে পারেননি তিনি। 

দিনটা ছিল ১৮ মে। গতবছর এমনই এক বিভীষিকার সাক্ষী হয়েছিল প্যালেস্তাইনের গাজা প্রদেশ। ইজরায়েলি বিমানহানায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল অসংখ্য প্রাণ। ধ্বংস হয়েছিল বহু প্রতিষ্ঠান, ভবন। সেই তালিকাতেই ছিল মনসুরের এই বই দোকান। যা গাজার ইউনিভার্সিটি স্ট্রিটের প্রাণকেন্দ্রও বটে। এবার সেই ধ্বংসযজ্ঞের প্রায় এক বছর পর নতুন করে সেজে উঠল ঐতিহ্যবাহী বইয়ের দোকানটি। দরজা খুলে গেল পাঠকদের জন্য। 

আজ থেকে ২২ বছর আগে এই বইয়ের দোকান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সামির মনসুর। শুধু প্যালেস্তাইনের বই-ই নয়, দেশ-বিদেশের প্রায় সমস্ত জনপ্রিয় বইয়েরই সন্ধান মিলত মনসুরের এই দোকানে। ফলে, প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় কয়েক বছরের মধ্যেই গাজার ইউনিভার্সিটি স্ট্রিটের প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে এই দোকান। পীঠস্থান হয়ে ওঠে বইপ্রেমীদের কাছে। 

ইজরায়েলি হামলার পর আবার যে ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তা স্বপ্নেও ভাবেননি মনসুর। তবে গাজার এই ঐতিহ্যবাহী দোকানকে পুনরুজ্জীবিত করতে এগিয়ে আসে মার্কিন স্বেচ্ছাসেবী ও মানবাধিকার সংস্থা জুটি। আন্তর্জাতিক তহবিলের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে আড়াই লক্ষ মার্কিন ডলারের অনুদান তুলে দেয় মনসুরের হাতে। সেই অর্থেই নতুন রূপ পেয়েছে বই দোকানটি। পাশাপাশি বহু মানুষ বই দান করেছেন মনসুরকে। মূল অবস্থান থেকে ১০০ মিটার দূরত্বে একটি নতুন জায়গায় পুনর্নিমিত হয়েছে দোকানটি। 

গত ফেব্রুয়ারি মাসেই এই দোকান উদ্বোধনের কথা ছিল। তবে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত সমস্যার কারণে সেইসময় পিছিয়ে যায় দোকান পুনর্প্রতিষ্ঠানের প্রক্রিয়া। 

বর্তমানে মনসুরের এই দ্বিতল দোকানে জায়গা পেয়েছে প্রায় ৪ লক্ষাধিক বই। যদিও একটা সময় প্রায় ১৬-১৮ লক্ষ বই থাকত এই দোকানে। সেই হারানো গৌরব ফিরে পেতে আরও খানিক সময় লাগবে তো বটেই। তবে বইয়ের চাহিদার ক্ষেত্রে প্যালিস্তিনিদের হতাশ করবেন না বলেই আশ্বাস দিচ্ছেন প্রৌঢ় বই বিক্রেতা…

Powered by Froala Editor

More From Author See More