চলতি শতকেই অমরত্বের চাবিকাঠি নাগালে পাবে মানুষ?

সুমন লিখেছিলেন, ‘অমরত্বের প্রত্যাশা নেই, নেই কোনো দাবি-দাওয়া…’ কিন্তু সত্যিই কি অমর হতে চায় না মানুষ? প্রাচীনকালে রাজা-মহারাজারা আয়ুবৃদ্ধির জন্য কিংবা অমৃতসুধা প্রস্তুতের জন্য নিয়োগ করতেন বিশেষ বৈদ্য, কেউ বা আবার ভরসা রাখতেন জ্যোতিষে। পরবর্তীতে অ্যালকেমিস্টরাও নানা উপায়ে সন্ধান করেছেন অমরত্বের। অমর হওয়ার এই নেশা আজও ছাড়েনি মানুষকে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতেই তাকে তালুবন্দি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আধুনিক গবেষকরা। কিন্তু অমরত্বকে নাগালে আনা সত্যিই কি সম্ভব?

সম্প্রতি দুবাই-এর মিউজিয়াম অফ দ্য ফিউচার-এ আয়োজিত এক বিশেষ আলোচনাসভায় এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেন বিশেষজ্ঞরা। আর সেখানেই উঠে এল এক আশ্চর্য বয়ান। চলতি শতাব্দীর মধ্যেই অমরত্বের রহস্য সমাধান করে ফেলতে চলেছে মানুষ। এই বয়ান যদি আমার-আপনার মতো আর পাঁচজন মানুষ কিংবা সাই-ফাই সিনেমার ডিরেক্টরের মুখে শোনা যেত, তবে তাতে আমল না দিলেও চলত। তবে দুবাই-এ এমনই আশ্চর্য বক্তব্য রাখলেন ডঃ হোসে কর্ডেইরো, যিনি বিগত কয়েক দশক ধরে জড়িয়ে রয়েছে আয়ুবৃদ্ধির গবেষণার সঙ্গে। এমনকি বয়ঃবৃদ্ধি রোধের প্রযুক্তির নৈতিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণকারী অলাভজনক সংস্থা ‘হিউম্যানিটি প্লাস’-এর চেয়ার পারসন তিনি। কাজেই এমন এক ব্যক্তির মন্তব্য ফেলে দেওয়া চলে না মোটেই। 

কর্ডেইরোর মতে আর এক দশকের মধ্যেই আয়ুবৃদ্ধির প্রক্রিয়া আয়ত্ত করতে পারবে মানুষ। সঙ্গে ২০৫০ সালের মধ্যে এমন প্রযুক্তি চলে আসবে, যার ব্যবহারে আজীবন যৌনবকালকে ধরে রাখার ক্ষমতা চলে আসবে মানুষের হাতে। ফলে, বার্ধক্যজনিত মৃত্যুকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে ‘অমর’ হয়ে উঠবে মানুষ। কিন্তু কীসের প্রেক্ষিতে তাঁর এই দাবি?

এক্ষেত্রে কর্ডেইরো তুলে এনেছেন মাস কয়েক আগে ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি বিশেষ গবেষণাপত্রকে। ল্যাবরেটরিতে স্টেম কোশের ব্যবহারে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন একটি অন্ধ ইঁদুরের। একইভাবে স্টেম কোশের ব্যবহারে বিছিন্ন হওয়া অঙ্গেরও পুনরুৎপাদন করে দেখিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। অবশ্য এই প্রযুক্তি মানুষের ওপর প্রয়োগ করার মতো পর্যায়ে পৌঁছায়নি, তা বলার অপেক্ষা থাকে না। কিন্তু কর্ডেইরোর কথায়, খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না তার জন্য। এই প্রযুক্তির ব্যবহারেই হৃদযন্ত্র, কিডনি, ফুসফুস কিংবা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের সক্ষমতাকে দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারবে মানুষ। পাশাপাশি বয়োবৃদ্ধির জন্য দায়ী বিভিন্ন শারীরিক উৎসেচক ও হরমোন এবং জিনকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায়ও কিছুদিনের মধ্যেই চলে আসবে মানুষের হাতে। তা নিয়েও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে গবেষণা। প্রযুক্তিগত এই উন্নতির ক্ষেত্রে বড়ো ভূমিকা থাকবে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তারও।

কর্ডেইরো ছাড়াও এই আলোচনাসভায় অংশ নিয়েছিলেন ডাঃ অ্যালেক্স ঝাভোরোঙ্কো, ডাঃ জেমস কার্কল্যান্ডের মতো বিশ্বের প্রথমসারির চিকিৎসাবিদরাও। উল্লেখ্য, এই দুই গবেষকও বর্তমানে কাজ করে চলেছে আয়ুবৃদ্ধির ক্ষেত্রেই। তাঁদের মতে, কর্ডেইরোর এই ভাবনা সম্পূর্ণভাবে সত্যি না হলেও, মানুষের আয়ুবৃদ্ধির হার চলতি শতকেই অনেকটা ধীর করে তোলা সম্ভব। উদাহরণ হিসাবে তাঁরা তুলে এনেছেন, গড় আয়ুর পরিসংখ্যান। ১৮৮১ সালে বিশ্বের মানুষের গড় আয়ু ছিল  ২৫.৭ বছর। আজকের দিনে যা এসে ঠেকেছে ৭০ বছরে। প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়নে আগামীতে মানুষ গড়ে ১০০ বছর পর্যন্তও বাঁচতে পারে, মনে করছেন তাঁরা। সবমিলিয়ে অমর না হয়ে উঠলেও, অমরত্বের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়া এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু সকলের সাধ্যের নাগালে কি আসবে এই প্রযুক্তি? একমাত্র সময়ই দিতে পারে সেই উত্তর।

Powered by Froala Editor

More From Author See More