দূষণে মৃতপ্রায় হাওড়ার ‘জীবনরেখা’ রাজাপুর ক্যানেল, বাঁচাতে লড়ছেন স্থানীয়রা

রাজাপুর ক্যানেল বয়ে গিয়েছে হাওড়া জেলার বুক ভিজিয়ে। হাওড়া জেলার সবচেয়ে বড় ও চওড়া খাল রাজাপুর ক্যানেল। উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে বয়ে এসে এই খাল দুই ভাগে ভাগ করেছে হাওড়া জেলাকে। রাজাপুর থেকে হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়ার ফুলেশ্বরের কাছে হুগলি নদীতে মিশেছে। হাওড়া জেলার অন্তরভাগের জীবনরেখা বলা যায় এই খালকে। এটি কিন্তু কাটা খাল নয়। রাজাপুর-হাওড়ার স্বাভাবিক ভূমিঢালের ওপর ছোট-ক্ষুদ্র জলধারা পুষ্ট হয়ে তৈরি হয়েছিল কোন সুদূর অতীতে। পরে এই স্বভাবিক জলধারার নাব্যতা বৃদ্ধি করার জন্য একে খনন করা হয়।

একদিকে স্বাভাবিক জলনিকাশি, অন্যদিকে সেচের জল ও মৎস্য-সম্পদ জেলার এক বড় অংশের মানুষের জীবিকার সংস্থান করে এসেছে। খালটিতে মাছ ধরে জীবন জীবিকানির্বাহ করতেন খালটির দু’পারের বহু জেলে পরিবার, এমন কী অন্যান্য গ্রাম, মৌজা, জেলা থেকেও বছরের নির্দিষ্ট সময়ে মাছ-নির্ভর মানুষ এসে জুটতেন এই রাজাপুর ক্যানেলের পাড়ে। এই খালটি ছিল সংলগ্ন অঞ্চলগুলির গর্ব। খাল থেকে দূরবর্তী অঞ্চলে গ্রীষ্মে গৃহস্থালির কাজে জলের টানাটানি চললেও রাজাপুর ক্যানেল সংলগ্ন গ্রামগুলিতে ছবিটা ছিল একদম অন্যরকম। স্নান থেকে রান্না সবই চলত এই জল দিয়েই। চাষের খেতে জলসেচ, তাও।

কিন্তু গত ১০ বছরে রাজাপুর ক্যানেলের জল রং বদলেছে। মাটিগোলা থেকে হয়েছে নিকশ কালো। মাছ-নির্ভর মানুষ জীবিকা বদলেছেন, মীন সন্তানেরা প্রায় হারিয়ে গেছে ক্যানেল থেকে। এমন কী পাঁকাল মাছের মতো শক্তজান মাছ অবধি মরে ভেসে উঠেছে, বলছেন স্থানীয় মানুষরা। “বছর আট-নয় আগে বিকেলে ওই ওইখান থেকে মনে হত যেন ভাত ফুটছে। জাল পাতা থাকত, মাছ ঘাই দিত’’-- বলছিলেন মেজুটি পোলে বৈকালিক আড্ডায় আসা বৃদ্ধ। এখন মাছের দেখা কদাচিৎ পাওয়া যায়। সেচের কাজেও আর এই খালের জল ব্যবহার করেন না চাষিরা। স্নান করতে হয় অনন্যোপায় হয়ে, ত্বকের রোগ দেখা যায় অনেকের মধ্যেই।

মৃতপ্রায় রাজাপুর খাল ও কানা দামোদর নদীকে বাঁচাতে ‘রাজাপুর খাল ও কানা দামোদর নদী বাঁচাও কমিটি’ তৈরি করেছেন সংলগ্ন এলাকার সাধারণ মানুষ। তাঁরা লাগাতার কর্মসূচী নিচ্ছেন এলাকার সকল আম জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করে রাজাপুর খাল ও কানা দামোদর নদীর দূষণ ও জবর দখল মুক্তির জন্য। মিলছে সাড়াও।

More From Author See More

Latest News See More