খাজনার অঙ্গীকার দিয়েই শুরু নিউ ইয়ার রেজোলিউশন, অন্যথায় প্রাণদণ্ড পর্যন্ত হতে পারত রোমে

এসেছে নতুন বছর। সারা দেশ জুড়ে সাজো সাজো রব। তবে তার উদযাপন ঠিক আজকের মতো নয়। নতুন বছর শুরু হত চাষের ক্ষেতে বীজ রোপণ করে। আর সময়টাও ছিল মার্চ মাসের মাঝামাঝি। তবে প্রাচীন সেই রোমান সাম্রাজ্যেও নববর্ষের উদযাপনে একটি বিষয়ে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। সেটি হল নববর্ষের অঙ্গীকার বা নিউ ইয়ার রেজোলিউশন। খ্রিস্টপূর্ব সময় থেকে আজও সমানে এগিয়ে চলেছে সেই প্রথা।

বছর শেষ হতেই সামাজিক মাধ্যম ভেসে যায় আজকাল। প্রত্যেকেই নতুন বছরের জন্য নতুন নতুন অঙ্গীকার নিতে থাকেন। কেউ সেই অঙ্গীকার মাথায় রাখেন। কেউ রাখেন না। কিন্তু কোথাও কি ভেবে দেখেছেন, এই প্রথার উৎস কোথায়? তাহলে বলতে হয় একটি প্রাচীন রোমান উৎসবের কথা। সেই উৎসবের নাম ‘আকিটু’। বছরের প্রথম দিনে রাজপথে আসতেন রাজা। সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়াত প্রজারা। রাজার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে অঙ্গীকার করতে হত প্রত্যেককে। তবে নিজের ইচ্ছামতো অঙ্গীকার নয়। রাজা নির্দিষ্ট বছরের জন্য কৃষকদের খাজনা নির্দিষ্ট করে দিতেন। আর কৃষকরা অঙ্গীকার করতেন, তাঁরা এই খাজনা দিতে বাধ্য থাকবেন। আর অন্যথায়? শাস্তির নানা পদ্ধতি ছিল। গরম তেলের ছ্যাঁকা থেকে শুরু করে শিরোচ্ছেদ পর্যন্ত সবই হতে পারত।

রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার এই নিষ্ঠুর প্রথাই ক্রমশ নতুন নতুন চেহারায় দেখা দিতে থাকে। জুলিয়াস সিজারের সময় রোমের ক্যালেন্ডারও বদলে যায়। বছর শুরু হয় জানুয়ারি মাসে। দেবতা জানুসের নাম অনুসারে জানুয়ারি। তাঁর একটি মুখ তাকিয়ে থাকে আগামীর দিকে, অন্যটি ফেলে আসা অতীরের দিকে। জুলিয়াস সিজারের সময় নিউ ইয়ার রেজোলিউশনের এক সম্পূর্ণ অন্য চেহারা দেখা যায়। রাজা স্বয়ং অঙ্গীকার করতেন ফেলে আসা বছরকে স্মৃতি থেকে মুছে ফেলবেন তিনি। পুরনো বিদ্বেষ ভুলে নতুন করে পররাষ্ট্রনীতি তৈরি হবে। আসলে অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপনের উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখেই এই প্রথা শুরু করেন জুলিয়াস সিজার।

রেনেসাঁর সময় প্রোটেস্টান্ট খ্রিস্টানদের মধ্যে আবারও জনপ্রিয় হতে থাকে নিউ ইয়ার রেজোলিউশন। এই প্রথম সমস্ত মানুষ নিজেদের ইচ্ছামতো অঙ্গীকার করার সুযোগ পেলেন। তবে সেই অঙ্গীকারের সাক্ষী থাকবেন প্রভু যিশু এবং গির্জার ফাদার। এই অঙ্গীকার অস্বীকার করলে সেটা পাপ হিসাবে গণ্য করা হবে। তবে নিউ ইয়ার রেজোলিউশনের এই নীরিহ চেহারাই আবার নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে ঔপনিবেশিক কালপর্বে এসে। অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ থেকে আফ্রিকা মহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে উপনিবেশ গড়ে তোলে নানা ইউরোপীয় দেশ। এই সময়, সম্ভবত ডাচদের দ্বারাই প্রথম নিউ ইয়ার রেজোলিউশনের নতুন চেহারা দেখা যায়। উপনিবেশের কালো মানুষদের উপর অত্যাচার ক্রমশ মাত্রা ছাড়াচ্ছে। আর তার মধ্যেই জমে উঠছে বিদ্রোহের বীজ। এই বিদ্রোহ যাতে দানা বাঁধতে না পারে, তাই নববর্ষের দিনে প্রত্যেককে দিয়ে শপথ করানো হতে থাকে যে তাঁরা রাজদ্রোহী হবেন না। তবে এভাবে শেষ রক্ষা হয়নি। বিশ শতকে বিদ্রোহীরাও এই একই দিনে অঙ্গীকার নিতে শুরু করেন, আফ্রিকাকে তাঁরা বিদেশি শাসনমুক্ত করবেন। আজও দক্ষিণ আফ্রিকার নানা দেশে সার্বিক স্বাধিকারের উদ্দেশ্যে একই অঙ্গীকার নিয়ে থাকেন বহু কালো চামড়ার খ্রিস্টান। তবে ধর্মীয় বেড়া টপকে সারা পৃথিবীতে এখন নিউ ইয়ার রেজোলিউশনের অর্থ অনেকটাই বদলে গিয়েছে। ইতিহাস যেন সত্যিই মুছে গিয়েছে।

Powered by Froala Editor