পেরিয়েছে ৮৭ বছর, আজও জীবাণুনাশক হিসেবে বাঙালির ভরসা ডেটল-ই

কোথাও কেটে গেছে? বা খেলতে গিয়ে ছড়ে গেছে? ভালোভাবে ঘর পরিষ্কার করতে হবে? এই সমস্ত কাজে সাহায্য করে একটা ছোট্ট কাচের বোতল। স্থানবিশেষে প্লাস্টিকও হতে পারে। কিন্তু ভেতরের পদার্থটি এক। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কথা বললে এক লহমায় সামনে ভেসে উঠবে ওই বাদামি রঙের সুগন্ধিযুক্ত তরলটির। জলে পড়লেই যা হয়ে যায় সাদা। এই দৃশ্য আমাদের প্রত্যেকের নস্টালজিয়ায় ঢুকে গেছে। ভারত থেকে ভিয়েতনাম— সব জায়গাতেই এর নাম। এখনও বুঝতে পারেননি? কথা হচ্ছে আমাদের চিরপরিচিত ডেটলকে নিয়ে। দীর্ঘ বহু বছর সুরক্ষা ও পরিচ্ছন্নতার অন্যতম প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি। বাঙালির ঘরেও সমান সমাদৃত এটি। ডেটল আর বোরোলিন – এই দুটো মজুত না থাকলে চলে!

একটা সামান্য জৈব রাসায়নিক দ্রব্য; নাম ক্লোরোজাইরেনল। প্রধানত অ্যান্টিসেপটিক আর জীবাণুনাশক হিসেবেই যার পরিচিতি ছিল। কিন্তু আজ এই নামে তাকে সাধারণ মানুষ চেনে না। দোকানে গেলে একটাই কথা, “দাদা, একটা ডেটল দিন তো!” ওই নামটির সঙ্গেই যেন অঙ্গাঙ্গীভাবে জুড়ে গেছে ব্র্যান্ডের নামও। ছোটবেলায় রসায়নের বইতেও জুড়ে ছিল যেটা। সমস্ত যাত্রা শুরু হয় আজ থেকে প্রায় ৮৮ বছর আগে। রেককিট বেনকিসার নামের এক ব্রিটিশ কোম্পানি বোতলজাত করল এই ক্লোরোজাইরেনল-কে। নাম দেওয়া হল ‘ডেটল’। সালটা ছিল ১৯৩২।

ডেটলের সঙ্গে আরও একটি জিনিসও আত্মপ্রকাশ করেছিল সেই সময়, হারপিক। বাজারে আসতে দুটিই সুপারহিট! ঠিক পরের বছরেই, ১৯৩৩ সালে ভারতেও হাজির হয় এটি। বলা বাহুল্য, তারপর থেকে আজ অবধি মুখ ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রথমে হাসপাতালগুলোতেই বেশি ব্যবহৃত হত। আজও চিকিৎসার কাজে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও সেখানে অন্যতম ভরসা এই ডেটল। পরে ঘরেও ঢুকে যায়। বাকিটা, ইতিহাস! আজ আমাদের জীবনেরই অঙ্গ হয়ে উঠেছে এই বাদামি তরল। প্রতিদ্বন্দ্বী কি ছিল না? তখনও ছিল, এখনও। কিন্তু নিজের জায়গা ধরে রেখেছে ডেটল। জীবাণুনাশক চরিত্র থেকে বেরিয়ে পরে আরও নানাদিকে ছড়িয়েছে এই কিংবদন্তি ব্র্যান্ড। সেখানেও হিট!

রেককিট বেনকিসার পরবর্তীতে আরও বহু প্রোডাক্ট বার করেছে, যা নিজের নিজের জায়গায় স্বমহিমায়। কিন্তু ৮৮ বছর ধরে চলা এই ইতিহাসকে কি অস্বীকার করা যায়। একটা সময় হংকং-এ ডেটল খেয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু তাতে একফোঁটাও আঁচড় পড়েনি এই ব্র্যান্ডের গায়ে। কেমন করে হবে! মায়েদের ভরসার জায়গা যে তাহলে সরে যাবে!