রীতিমতো ট্রফি হিসেবে মানুষের মাথা সাজিয়ে রাখতেন ভারতের এই গ্রামের বাসিন্দারা

ভারতের মেঘালয়ের ওয়েস্ট গারো হিলের এক প্রত্যন্ত অঞ্চল। পাহাড়ে জঙ্গলে ঘেরা এলাকার কোলে লুকিয়ে আছে একটা গ্রাম। সেখানেই থাকেন সংসারে-রারা। মেঘালয়ের একটি আদিবাসী জাতি। ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে বাস এই ‘হেড হান্টার’-দের। হ্যাঁ, এই আদিবাসী জাতি একটা সময় রীতিমতো মাথা শিকার করতেন তাঁদের পুজোর জন্য। মাথা বলতে, মানুষের মাথা।

ছোট ছোট কুঁড়েঘরে বাস করেন সংসারেক-রা। এখন অবশ্য শিক্ষার আলো একটু একটু করে পৌঁছোচ্ছে এখানে। পৌঁছোচ্ছে মোবাইল, সভ্যতার নানা উপকরণ। কিন্তু এঁদেরই একটা সময় রীতিমত ভয় পেত লোকে। কারণ, এঁদের শিকারের মনোভাব। আরও স্পষ্ট করে বললে, ‘মাথা’ শিকারের। এই মাথা শিকার এঁদের শক্তি প্রদর্শনের, ক্ষমতা প্রদর্শনের একটা অঙ্গ ছিল বলা চলে। যার বাড়িতে যটা মাথা, মানে নরমুণ্ড থাকবে, তাঁর প্রতিপত্তি তত বেশি। এদের প্রথাগত পুজোর সঙ্গেও এর যোগ রয়েছে। এই পুজোর একটি অন্যতম আচার হল ‘ত্যাগ’। অর্থাৎ, দেবতার উদ্দেশ্যে বলিপ্রদান। একটা সময় এই অনুষ্ঠানেই নরবলি করা হত। তারপর সেই মাথা এনে, ‘ট্রফির’ মতো সাজিয়ে রাখা থাকত ছোট ঘরগুলিতে।

২০০ বছর আগের সেই নরবলির প্রথা এখন আর নেই। নেই সেই নরমুণ্ডও। সংখ্যায়ও ধীরে ধীরে কমে আসছে সংসারেকরা। তাঁদের আচার, তাঁদের পুজো, তাঁদের উৎসব— সমস্ত কিছুই বিপন্নতার মুখে। এই আদিবাসী জাতির মধ্যে যারা পড়াশোনা ও জীবিকার জন্য অন্যত্র থাকেন, তাঁরা এখন প্রবল চেষ্টায় রয়েছেন এই সংস্কৃতিকে উদ্ধার করার। যারা আছেন, তাঁদের মধ্যে দিয়েই বাঁচিয়ে রাখার একটা চেষ্টা করছেন তাঁরা। শিক্ষা, আধুনিকতার সঙ্গে যাতে পুরনো ঐতিহ্য হারিয়ে না যায়, সেই চেষ্টাই জারি রয়েছে এখন।