পড়ুয়াদের জন্য ‘সুখী পাঠক্রম’, অনন্য নজির কেরলের আবাসিক স্কুলে

গত বছরের মার্চ মাসের কথা। ভারতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পরেই তালা ঝুলেছিল দেশের সমস্ত স্কুলে। প্রায় আঠারো মাস বন্ধ থাকার পর এবার ধীরে ধীরে আবার সচল হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা। ডিজিটাল মাধ্যম ছেড়ে অবশেষে ক্লাসে ফিরছে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু দীর্ঘদিন বাড়িতে থেকে ক্লাস করার পর হঠাৎ এই পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের পক্ষে মানিয়ে নেওয়া বেশ কঠিন, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। তাই স্কুলের অভ্যন্তরে শিক্ষার্থীদের ঘরোয়া পরিবেশের অনুভূতি দিতে অভিনব উদ্যোগ নিল কেরলের (Karala) স্কুল।

না, সরাসরি পঠন-পাঠন নয়। বরং, স্কুল চালু হওয়ার পর প্রথম দু’সপ্তাহ গান, নাচ, শিল্পচর্চা ও অন্যান্য নানান কার্যকলাপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করার মানসিকতা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছিল কেরল সরকার। গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষেই কেরল সরকার ঘোষণা করেছিল এই ‘হ্যাপিনেস ক্যারিকুলাম’-এর (Happiness Carriculum) প্রকল্প। প্রকাশ করেছিল বিশেষ গাইডলাইনও। 

গতকাল, ১ নভেম্বর থেকে স্কুল খোলার পর, কেরলের প্রায় সমস্ত স্কুলই স্বাগত জানিয়েছিল সরকারের এই পন্থাকে। তবে কিজমাদ গ্রামের মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল তৈরি করল এক বিরল নজির। অন্য মাত্রায় নিয়ে গেল ‘সুখী পাঠক্রম’-কে। বলতে গেলে, ঠিক যেন উৎসব পালিত হচ্ছে এই স্কুলে। আবাসিক স্কুল হওয়ায়, স্কুলের স্বাভাবিক সময়ের বাইরেও সেখানে আপন খেয়ালে চলছে পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যকলাপ। বালাই নেই ইউনিফর্মেরও। সকালে ঘুম থেকে উঠেই কেউ হাত লাগাচ্ছে বাগান তৈরিতে, কেউ আবার খেলতে দৌড়াচ্ছে মাঠে। যাদের এসবে আগ্রহ নেই, তাদের জন্য খোলা রয়েছে লাইব্রেরির দরজা। স্কুলের সময়ে চলছে গান, নাচ, ছবি আঁকা, অভিনয়ের চর্চা। কিংবা গল্পের ছলেই সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলির সম্পর্কে অল্প অল্প ধারণা দিচ্ছেন শিক্ষকরা। আবার সন্ধেবেলা থেকেই বসছে চলচ্চিত্রের আসর। বড়ো পর্দায় শুধু ভালো ভালো সিনেমা দেখানোই নয়, সেইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিনেমার পর্যালোচনাও করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কচিকাচাদের কাছে এ যেন এক সব পাই-এর দুনিয়া। 


আরও পড়ুন
স্যুট পরে হাজিরা স্কুলে, ‘স্বাভাবিক’ ছন্দে ফিরছে ‘রিয়েল লাইফ মোগলি’

কেরলের এই স্কুলের প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীই স্কুলের আবাসিক, বোর্ডার। অধিকাংশেরই বাড়ি কেরলের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে। ফলে, সচরাচর বাড়ি যাওয়ার সুযোগ মেলে না তাদের। তবে মহামারীর কারণে পাওয়া গিয়েছিল দীর্ঘ ছুটি। তারপর প্রায় দেড় বছরের ছুটি কাটিয়ে পরিবার-পরিজনকে ছেড়ে আবার ‘বোর্ডিং’-এ ফেরা— মানসিকভাবে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং শিক্ষার্থীদের কাছে। তাই সরকারের নির্দেশিকায় আরও কিছু বদল এনে তা ছাত্রছাত্রীদের উপযোগী করে তুলেছে সংশ্লিষ্ট স্কুলটি। আপাতত পরবর্তী দু’সপ্তাহ এভাবেই ‘রুটিনহীন’ ক্লাস চলবে বলেই জানাচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তারপর ধীরে ধীরে ফেরা হবে স্বাভাবিক পঠনপাঠনের পথে। 

আরও পড়ুন
নিজে হাতে সোলার সাইকেল তৈরি করে চমক গুজরাটের স্কুলপড়ুয়ার

শুধুমাত্র লকডাউনের সময়েই কেরলে সব মিলিয়ে আত্মহত্যা করেছিল ৬৬ জন স্কুল পড়ুয়া। এই পরিসংখ্যান প্রকাশ পাওয়ার পরই, বার বার আলোচনায় উঠে আসছিল শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রসঙ্গ। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের এই উদ্যোগ গোটা ভারতের কাছেই ‘মডেল’-স্বরূপ… 

আরও পড়ুন
স্কুলের পাঠ্যক্রমে এলজিবিটিকিউ ইতিহাস, বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে নজির স্কটল্যান্ডের

Powered by Froala Editor