গ্রিনল্যান্ডের বুকে বৃষ্টিপাত, ইতিহাসে প্রথমবার

সামান্য দু-একফোঁটা বৃষ্টি, তবে ইতিহাসে এমন ঘটনা এই প্রথম। গতমাসের মাঝামাঝি বৃষ্টি পড়তে দেখা যায় গ্রিনল্যান্ডে (Greenland)। আর এই ঘটনাতেই বিস্মিত এবং চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। পৃথিবীর সব্বচেয়ে উত্তরে বিরাট বরফের স্তূপে ঢাকা দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড। সেখানে তরল অবস্থায় জলের উপস্থিতি কল্পনা করাই অসম্ভব মনে হত এতদিন। কিন্তু ক্রমশ বিশ্ব উষ্ণায়নের কবলে পড়ে বদলাচ্ছে গ্রিনল্যান্ডের পরিবেশ। আর তারই ফলশ্রুতি বরফের চাদরের উপর বৃষ্টিপাত। তরল জলের সংস্পর্শে বরফের উষ্ণতা সামান্য হলেও বেড়েছে। আর আগামীদিনে এই ঘটনার পুণরাবৃত্তি হলে সারা পৃথিবীর জন্যই তা বিপদসংকেত। এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বরফ রয়েছে দুই মেরুতে। আন্টার্কটিকায় বরফের পরিমাণ সর্বাধিক। তবে সেটা বাদ দিলে বাকি পৃথিবীর সমস্ত হিমবাহের বরফ যোগ করলে যা পরিমাণ দাঁড়ায়, গ্রিনল্যান্ডের রয়েছে তার ৩৬ হাজার গুণ বেশি বরফ। ভাগ্যিস এই বরফ মেরু অঞ্চলে জমে রয়েছে। নাহলে সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে যেত অনেকটাই। এবং অন্তত ৩ কোটি মানুষ বাসস্থান হারাতেন। তবে এর মধ্যেই গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলতে শুরু করেছে। বাড়ছে উষ্ণতাও। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের জানা ইতিহাসের উষ্ণতম ৬টি বছর হল ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল। আর গত এক দশকে গ্রিনল্যান্ডে যে পরিমাণ বরফ গলেছে, তা বিশ শতকের মোট পরিমাণকেও ছাপিয়ে যায়। ফলে এখনই সচেতন না হলে পরিস্থিতি ক্রমশই হাতের বাইরে চলে যাবে।

২০১২ সালেই বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, গ্রিনল্যান্ডের সুরক্ষার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ১ কোটি মানুষের বাসভূমি বন্যায় ভেসে যাবে। ২০৩০ সাল আর ঠিক ৯ বছর বাদের কড়া নাড়বে। অথচ এখনও পর্যন্ত পরিবেশের অবস্থার বিশেষ কোনো উন্নতি তো হয়নি, বরং পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে এগোচ্ছে। ইতিমধ্যে মিয়ামি, ফ্লোরিডা সহ পৃথিবীর বহু উপকূল অঞ্চলে সমুদ্রের দাপট প্রবল রূপ নিতে শুরু করেছে। আর তার মধ্যেই নতুন করে আশঙ্কার কথা শোনাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। শুধু উত্তর মেরুই নয়। এবার অবক্ষয়ের মুখে পড়তে চলেছে দক্ষিণ মেরু, অর্থাৎ আন্টার্কটিকাও। এই দুই মেরুর বরফ সম্পূর্ণ গলে গেলে পৃথিবীতে স্থলভাগ বলে আর কিছু থাকবেই না। তাই মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই বাঁচাতে হবে পরিবেশকে।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনে চেহারা পাল্টাচ্ছে পাখিদেরও!