এবার শিক্ষাক্ষেত্রেও কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ, আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার আয়োজনের জন্য নিতে হবে অনুমতি

করোনা পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা প্রায় পুরোটাই অনলাইন মাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে। এতে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থায় যেমন নানা সমস্যার সূত্রপাত ঘটেছে, তেমনই উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন নতুন সম্ভাবনাও খুলে গিয়েছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক আলোচনাসভার আয়োজন এখন আগের থেকে অনেক সহজ। বিরাট অডিটোরিয়ামের ব্যবস্থা বা বিদেশের বক্তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করার কোনো প্রয়োজন হয় না। সবটাই এখন খুব সহজ। কিন্তু তার মধ্যেই সরকারের নির্দেশকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রকের তরফ থেকে জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সরকারি ও আধাসরকারি সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের আয়োজন করতে গেলে কেন্দ্রের সবুজ সংকেত নিতে হবে। আর তার জন্য প্রমাণ করতে হবে, দেশের কোনো অভ্যন্তরীণ বিষয় অথবা বিদেশনীতি সম্মন্ধে আলোচনা করা হবে না। অবশ্য অভ্যন্তরীণ বিষয় বলতে ঠিক কোন ধরণের বিষয়ের কথা বলা হচ্ছে, সেটা স্পষ্ট করা হয়নি। শিক্ষাবিদদের অনেকেই বলছেন, দেশের অর্থনীতি বা সমাজনীতিও তো অভ্যন্তরীন বিষয়। কিন্তু এইসব বিষয়ে আলোচনার ভিতর দিয়েই তো নতুন নতুন ধারণার জন্ম হয়। আজও দেশের নানা প্রান্তে লিঙ্গবৈষম্য, জাতিবৈষম্য নিয়ে আলোচনা করা সমাজবিজ্ঞানীদের নৈতিক দায়িত্ব। তবে কি এসবের মধ্যেও নেমে আসবে নিষেধাজ্ঞা?

সরকারের নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, ওয়েবিনারের আবেদনের জন্য সমস্ত বিদেশি বক্তা ও অতিথিদের নাম মন্ত্রকের কাছে জমা দিতে হবে। তবে যদি কোনো ওয়েবিনারে বিদেশি কোনো বক্তা না থাকেন, তাহলেও কি অনুমতি নিতে হবে? সেটা অবশ্য স্পষ্ট করা হয়নি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সরকারকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতেই হয়। কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রের সঙ্গে রাজনীতিকে জড়িয়ে ফেলার কি আদৌ কোনো যৌক্তিকতা আছে? বিতর্ক আরও ঘনীভূত হয়, যখন মনে পড়ে ২০১৯ সালে ঝাড়খণ্ডে ‘দেশবিরোধী’ বক্তব্য রাখার জন্য গ্রেপ্তার করা হয় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজ বা ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহকে।

তাছাড়া এই নির্দেশিকার সময়টাও বেশ অবাক করে। রাজধানী দিল্লির বুকে কৃষক আন্দোলনের সংহতিতে যখন পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে বার্তা এসে পৌঁছচ্ছে, ঠিক সেই সময়েই এই নির্দেশিকা আনছে কেন্দ্র। শুধু তাই নয়, ট্যুইটার কর্তৃপক্ষের কাছেও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কৃষক আন্দোলনের মতো ‘স্পর্শকাতর’ বিষয় নিয়ে সমস্ত পোস্ট ব্যান করতে হবে। অন্যথায় ভারতে ট্যুইটার ব্যান করা হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, অমর্ত্য সেনও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কৃষিবিল দেশের অর্থনীতির পক্ষে যথেষ্ট ক্ষতিকারক। সরকারের সমস্ত নীতিকে ঘিরে আলোচনা বন্ধ করতেই কি এভাবে নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা চলছে? প্রশ্ন উঠছে। মুক্তচিন্তার বাতাবরণকে খর্ব করতে গেলে এমন প্রশ্ন উঠবেই।

(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
৭০ বছর ধরে গ্রামের দরিদ্রদের শিক্ষাদান, পদ্মশ্রী পেলেন শতায়ু নন্দ প্রুস্তি

More From Author See More