লকডাউনে বাড়ছে শিশু নির্যাতন, হেল্পলাইনে এগারো দিনে ৯২০০০ অভিযোগ

দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হওয়ার পর কেটেছে ১৫ দিন। আর এর মধ্যেই এসেছে ৯২,০০০টি ফোন কল। এমনই জানা গেল সরকারের চাইল্ড হেল্পলাইন থেকে। যার অর্থ, লকডাউনের এই গৃহবন্দি দশায় বেড়েছে গার্হস্থ্য হিংস্রতা। শুধু মহিলারা নন, এই হিংসার শিকার হচ্ছে শিশুরাও।

হার্লিন ওয়ালিয়া, ভারতীয় চাইল্ড হেল্পলাইনের ডেপুটি ডিরেক্টর জানান, মার্চের ২০ থেকে ৩১ তারিখের মধ্যে সারা দেশ থেকে প্রায় তিন লাখ ফোন এসেছে ১০৯৮ – এই নম্বরে। এটি লকডাউনের শুধুমাত্র প্রথম সপ্তাহের তথ্য। যার মধ্যে তিরিশ শতাংশ অর্থাৎ ৯২ হাজার ফোন এসেছে শিশুদের ওপর হিংস্রতা এবং নির্যাতনের জন্য সুরক্ষা চেয়ে। চাইল্ডলাইনের ডেপুটি ওয়ালিয়া জানান, লকডাউনের পর এই হিংস্রতা অন্য সময়ের তুলনায় বেড়ে গেছে প্রায় ৩০ শতাংশ।

মহিলা এবং শিশুবিকাশ মন্ত্রক একটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছিল গত মঙ্গলবার। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল শিশুদের সুরক্ষা প্রদান করা। সকল জেলার সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা উপস্থিত ছিলেন এই ওয়ার্কশপে। সেখানেই প্রকাশ করা হয় এই তথ্য। ওই ওয়ার্কশপে করোনা ভাইরাস সম্বন্ধীয় সমস্যার সমাধানের প্রেক্ষিতে কথাবার্তা হয়। আলোচনা হয়, এই লকডাউনে শিশুদের মানসিক চাপ কীভাবে কমানো যায়, তার উপরেও।

উল্লেখিত ৩০ শতাংশ ফোন ছাড়া, ১০৯৮-এ আসা বাকি ফোনগুলি করা হয়েছে শিশুশ্রম (৮%), গৃহহীনতা (৫%), শারীরিক সমস্যা (১১%) এবং নিরুদ্দেশ (৮%) সম্পর্কে। পাশাপাশি ১,৬৭৭টি ফোন আসে করোনা ভাইরাসের উপর নানান প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। অসুস্থদের থেকে আসে ২৩৭টি ফোন। এমনটাই জানানো হয় ওই মিটিংয়ে।

লকডাউনে মহিলারা বেশি শিকার হচ্ছেন গার্হস্থ্য হিংস্রতার। লকডাউনের প্রথম সপ্তাহে মহিলাদের বিরুদ্ধে নানান অপরাধের ২৫৭টি অভিযোগ জমা পড়ে । তবে, ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের ঘটনার সংখ্যা বাস্তবে এর থেকে অনেক অনেক বেশি। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগ করতে সাহস পান না অনেকে। অনেকেই ভয় পান সংসার এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের। পুলিশ ব্যবস্থা নিলে নিপীড়ন বাড়তে পারে আরও।

গৃহবন্দি দশা সকলেরই মানসিক চাপ বাড়িয়েছে। নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং অর্থ তিনটি জিনিসই ভাবিয়ে তুলছে মানুষকে। বাড়ছে মানসিক হিংস্রতা। যার শিকার হচ্ছেন মহিলারা এবং শিশুরা। শিশু সুরক্ষা মন্ত্রকের তরফে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে এদিন চিঠি দেওয়া হয়। আবেদন করা হয় ১০৯৮ টোল ফ্রি নম্বরকে কোভিড-১৯ এর সময় জরুরি ব্যবস্থার মধ্যে অন্তর্গত করার।

দেশের ছ’টি শিশু বিকাশ সংস্থা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের কাছে একত্রে আবেদন জানায় ২রা এপ্রিল। আর্জি, নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ চালিয়ে যাওয়ার সংকটপূর্ণ ঘটনাগুলির। শিশু অধিকার বিভাগের তরফে জানানো হয়, সামাজিক সুরক্ষার পাশাপাশি গরিব শিশু এবং পরিবারদের কাছে সাহায্যও পৌঁছে দেওয়া উচিত সরকারের। কোভিড-১৯ এর জাতীয় সংকটে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ঘটনা। এখন দেখার, সরকার এই বিষয়ে কত দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।