পরীক্ষা নিতে অনড়, ফল প্রকাশে অনীহা : কেন্দ্রের ‘তুঘলকি’ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ দেশজুড়ে

#SpeakUpForSSCRailwaysStudents

প্রায় সারাদিন ধরে গতকাল এটাই ছিল টুইটারে সবথেকে বেশি ব্যবহার হওয়া হ্যাশট্যাগ। দেশের শিক্ষা এবং চাকরি ব্যবস্থায় সরকারি ঔদাসীন্য যে কোন জায়গায় পৌঁছেছে, তারই যেন একটা আচমকা বহিঃপ্রকাশ ঘটে গেল সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভারতীয় রেলের চাকরির পরীক্ষার রেজাল্ট বের করতে দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের টালবাহানা জেরেই এই আচমকা বিস্ফোরণ নেট দুনিয়ায়।

প্রতিবাদকারীদের মূল বক্তব্য - যেখানে এই করোনা পরিস্থিতিতে সরকার জেইই বা নিট পরীক্ষা নিতে একগুঁয়ে মনোভাব দেখাচ্ছে, সেখানে আগেই হয়ে যাওয়া পরীক্ষার ফলাফলটুকু কেন প্রকাশ করতে পারছে না?

বস্তুত সাম্প্রতিক জেইই বা নিট পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে যে কতটা ক্ষোভ জমেছিল জনসাধারণের মনে, তা কদিন আগেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে ডিজলাইকের বাহুল্য। অতিমারী পরিস্থিতিতেও সরকার সারা দেশের প্রতিবাদে কান না দিয়ে এই পরীক্ষা করবার সিদ্ধান্তে অনড় ছিল। ছাত্র-ছাত্রীদের সুরক্ষার প্রশ্ন উঠলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের তরফ থেকে নির্দ্বিধায় জানানো হয়েছিল, ছাত্র-ছাত্রীদের এবং তাদের অভিভাবকদের চাপে পড়েই নাকি এই পরীক্ষা নিতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। যদিও বাস্তব ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাপক প্রতিবাদ অন্য কথাই বলছে। এই সমস্ত অভিযোগে কান না দিয়ে, ঠিক যেদিন থেকে জয়েন এন্ট্রান্স পরীক্ষা শুরু হল, সেই দিনটিকেই বাকি যুবসমাজ বেছে নিল প্রতিবাদের জন্য।

আরও পড়ুন
কলেজের মেধাতালিকায় পর্নস্টারদের নাম; শিক্ষাব্যবস্থার ‘ঠাট্টা’ই কি নগ্ন হয়ে উঠল আরও?

আর ঠিক কতদিন সরকারি চাকরির জন্য পরীক্ষা দিয়েও ফলাফলের জন্য হা-পিত্যেশ করে বসে থাকতে হবে পরীক্ষার্থীদের, সেই নিয়ে হা-হুতাশ চলছেই। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে পরীক্ষার্থীদের। যে পরীক্ষাটির ফলাফলকে কেন্দ্র করে এত বিতর্ক, স্টাফ সিলেকশন কমিশন সেই সিজিএল পরীক্ষাটির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল ২০১৮ সালে। প্রথম এবং দ্বিতীয় স্তরের পরে ২০১৮ সালে হয়ে গিয়েছিল তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষাটিও। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি পদে  ১১,০০০ শূন্যপদ পূরণ হওয়ার কথা ছিল এর মাধ্যমে। কিন্তু তারপরে ১৮ মাস কেটে গেলেও কোনো উচ্চবাচ্য শোনা যায়নি সরকারের তরফে। স্বাভাবিকভাবেই প্রথমে হতাশা এবং তারপরে পুঞ্জীভূত হয়েছে ক্ষোভ।

২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে রেল মন্ত্রক জানিয়েছিল, পরীক্ষাটির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে ২০২০ সালের মে মাস থেকে এবং ২০২১ সালের জুলাই আগস্ট মাসের মধ্যে নিয়োগ সম্পূর্ণ হবে ৯৯ হাজার শূন্যপদে। কিন্তু প্রতিশ্রুতিই সার। নিয়োগ তো দূর, এখনও পর্যন্ত অ্যাডমিট কার্ডই প্রকাশ করা হয়নি এই প্রক্রিয়াটির।

আরও পড়ুন
অনলাইনে ক্লাস আছে, নেই বিদ্যালয়; ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিক’ শিক্ষা কি সংকীর্ণতায় ঠেলে দিচ্ছে পড়ুয়াদের?

অন্যদিকে সমস্যা দেখা দিয়েছে রেলের অপর কয়েকটি নিয়োগের ক্ষেত্রেও। ২০১৯-এর ডিসেম্বর মাসে রেলওয়ে নিয়োগ বোর্ড অর্থাৎ আরআরবি সহকারী লোকো পাইলট ও প্রযুক্তিবিদ নিয়োগের পরীক্ষার মেধা তালিকা প্রকাশ করেছিল। শর্টলিস্টও করা হয়েছিল যোগ্য প্রার্থীদের। কিন্তু তার সাত মাস পরেও এখনো নিয়োগের চিঠি পাননি তাঁরা কেউই। অর্থাৎ তালিকায় নাম উঠলেও চাকরিতে যোগদান করতে অপারগ প্রার্থীরা। স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রীয় সরকার এবং রেলের চূড়ান্ত অপেশাদার মনোভাব এবং গাফিলতির বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বাড়ছে অসন্তোষ।

বিরোধিতার সুযোগ পেয়ে রাজনৈতিক তরজাও উঠেছে তুঙ্গে। প্রধান বিরোধী দল কর্মসংস্থান এবং বেকারত্ব নিয়ে মুখ খুলেছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। বাস্তবে পরিসংখ্যান বলছে যে বছরে ২ কোটি চাকরি তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে যেখানে ক্ষমতায় এসেছিল এই সরকার, সেখানে বাস্তবে ঘটেছে উল্টোটাই। জীবিকা হারিয়ে কর্মহীন হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। সুতরাং এই পরিস্থিতিতে জোর করে একদিকে পরীক্ষাগ্রহণ অন্যদিকে দীর্ঘদিন আগে পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পরেও তার ফল প্রকাশ করার ব্যর্থতা, এই দ্বৈত ছবির মাঝখানে পড়ে থাকছে একটা অসীম শূন্যতা, যে শূন্যতায় বাকি প্রচার সর্বস্ব মিডিয়ার কোনও ভূমিকা নেই। দেশজুড়ে বিখ্যাত শিক্ষাবিদেরা যে আওয়াজ উঠিয়েছেন, তার ন্যূনতম কোনো প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠছে না কোথাও।

সরকারি ঔদাসিন্যের পাশাপাশি চাকরিপ্রার্থী অথবা ছাত্র-ছাত্রীদের এই প্রতিবাদ মিছিল যেখানে সামনের সারিতে উঠে আসার কথা ছিল, তার বদলে যেভাবে পরিকল্পিতভাবে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে এই বিষয়গুলিকে, তাতে সাদাচোখে একটা খটকা লাগা খুব স্বাভাবিক। অগত্যা ভরসা হয়ে উঠছে তাই সোশ্যাল মিডিয়া। আছড়ে পড়ছে প্রতিবাদের ঝড়। কিন্তু এই ঝড়ের শব্দ কেন্দ্রীয় সরকারের কানে পৌঁছোয় কিনা, সেটাই এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন।

(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

Powered by Froala Editor

More From Author See More