অসমে গুলিবিদ্ধকে পদাঘাত সরকারি চিত্রগ্রাহকের, বাঙালি-বিদ্বেষের প্রতিফলন?

‘বে-আইনি অনুপ্রবেশকারী’-দের (Encroachers) উৎখাত করতে বৃহস্পতিবার অসমের (Assam) ঢোলপুর ৩ নং এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। সঙ্গে গিয়েছিলেন সরকারি চিত্রগ্রাহক। পরিস্থিতি ক্যামেরাবন্দি করাই তাঁর কাজ। কিন্তু অন্য একটি ক্যামেরায় ধরা পড়ে, সেই চিত্রগ্রাহক নিজেই লাঠি নিয়ে তাড়া করে যাচ্ছেন এক ব্যক্তির দিকে। শুধু তাই নয়, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক ব্যক্তি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সেই চিত্রগ্রাহক তাঁর বুকের উপর উঠে লাফাতে থাকেন। কয়েকজন পুলিশকর্মী তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তিনি প্রবল আক্রোশে লাথি এবং ঘুষি ছুড়তে থাকেন। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই দেশজুড়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে।

অসমের দরং জেলার সিপাঝারে দীর্ঘদিন থেকেই বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের উৎখাত করার চেষ্টা করে আসছে পুলিশ। এর মধ্যে গত মাসেই আদালতে যায়। অনুপ্রবেশকারীরা জানান তাঁরা সমস্ত আইন মেনেই বাংলাদেশের সীমান্ত পেরিয়ে এদেশে এসেছেন, এবং আইন মেনেই জায়গা দখল করেছেন। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় তাঁরা সরকারি জমিতে অনুমতি ছাড়াই বসবাস করছেন। মামলা এখনও আদালতে বিচারাধীন। বসবাসকারীরা কেউ আদালতের কাছে দ্বিতীয় বক্তব্য পেশ করার সময়ও পাননি। এর মধ্যেই সিপাঝারে একের পর এক অভিযান চালাতে শুরু করেছে পুলিশ। মোট ৪৫০ বিঘা জমিতে ৮০০ পরিবারের বাস। তার মধ্যে ৬০০ পরিবারকে উৎখাত করা হয়ে গিয়েছে আগেই। তাঁরা কোথায়, সে-খবর কেউ জানেন না। বাকি ১২০ বিঘা জমিতে ২০০টি পরিবার মাটি আঁকড়ে পড়ে রয়েছে। বৃহস্পতিবার সেখানে পুলিশ অভিযান চালানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশের পক্ষ থেকে লাঠি, গুলি এবং কাঁদানে গ্যাস চালানোর স্পষ্ট ফুটেজ দেখা গিয়েছে। অন্যদিকে পুলিশের দাবি, তাঁরা প্রথমে শূন্যে গুলি চালিয়েছিলেন। কিন্তু বাসিন্দারাই পাথর ছুঁড়তে শুরু করেছিলেন তাঁদের দিকে।

একদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চলতি বছরের শুরুতেই জানিয়েছেন, বে-আইনি অনুপ্রবেশকারীদের সরিয়ে অসমের স্থায়ী উপজাতিদের হাতে তুলে দেওয়া হবে সরকারি জমি। অন্যদিকে কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে এই জমিতে একটি কৃষিভিত্তিক বাণিজ্যিক কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলছে। একটি বে-সরকারি সংস্থার সঙ্গে সমস্ত চুক্তিও হয়ে গিয়েছে। আর তার ফলেই পুলিশ আদালতের রায়ের অপেক্ষা না করেই একের পর এক অভিযান চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেকে। এর মধ্যেই সরকারি চিত্রগ্রাহকের আক্রোশ প্রমাণ করে দেয়, হিংসার বীজ কতটা গভীরে প্রবেশ করেছে। দীর্ঘদিন ধরেই অনুপ্রবেশকারী ইস্যুতে সরগরম ভারতীয় রাজনীতি। রাজনৈতিক দলগুলির ভিতর থেকে হিংসার বীজ ছড়াচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও। সামাজিক মাধ্যম থেকে রাস্তাঘাটে, সর্বত্র হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষরা। বলা বাহুল্য, তাঁদের বেশিরভাগই আইন মেনে এসেছেন। ভারত সরকার তাঁদের নাগরিকত্ব প্রদানও করেছেন। কিন্তু নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে এখনও আন্দোলন চলছে। কিন্তু আইনের চেয়েও মানুষকে নিরাপত্তা দিতে সবার আগে প্রয়োজন হিংসামুক্ত সমাজ। অসমের সরকারি চিত্রগ্রাহকের আচরণে আবারও সেটাই প্রশ্নের মুখে দাঁড়াল।

Powered by Froala Editor