কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কিত স্বয়ং এআই-এর গডফাদার!

চ্যাট জিপিটি। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে নামটা আর অপরিচিত নয় কারোর কাছেই। ইলন মাস্কের সংস্থা ‘ওপেন এআই’-এর এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) ইতিমধ্যেই চমক লাগিয়েছে বিশ্বজুড়ে। তবে এই প্রযুক্তির নেপথ্যে রয়েছেন আরও এক ব্রিটিশ-কানাডিয়ান গবেষক। জেফ্রি হিন্টন (Geoffrey Hinton)। না, জেফ্রি ‘ওপেন এআই’-এর কর্মী নয়। বরং, কাজ করতেন তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থা ‘গুগল’-এ। তবে ডিপ লার্নিং ও নিউরাল নেটওয়ার্কিং-এর গবেষণায় পথিকৃৎ মনে করা হয় জেফ্রিকে। তাঁর এই গবেষণার ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে তৈরি হয় ‘চ্যাট জিপিটি’-র মতো এআই। 

তবে সম্প্রতি তাঁর মুখেই শোনা গেল এক আশ্চর্য বয়ান। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশে নিজের গবেষণা এবং কাজের জন্য নিজেই অনুতপ্ত ‘এআই-এর গডফাদার’। ৭৫ বছর বয়সি গবেষকের অভিমত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দাপটেই ভয়ঙ্কর ভবিষ্যৎ হাজির হবে মানুষের সামনে। এমনকি এই সুদূর ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি ভীত! কিন্তু কী আশঙ্কা করছেন জেফ্রি? 

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, বিশ্বের সমস্ত প্রযুক্তিতেই ভালো ও খারাপ— উভয় উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করা সম্ভব। এক্ষেত্রেও একইরকম ব্যাপারটা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চরম অপব্যবহার শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হতে এআই-কে হাতিয়ার করে নিয়েছেন বহু অসৎ ব্যক্তি। এআই-এর মাধ্যমে নিমেষের মধ্যে তৈরি করা হচ্ছে ভুয়ো খবর, ভুয়ো ছবি। দেখতে গেলে, যুদ্ধাস্ত্র কিংবা পারমাণবিক অস্ত্রের থেকেও ভয়ঙ্কর এই প্রযুক্তি। কারণ, মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে নয়, বরং এই প্রযুক্তির ব্যবহারকারী আদতে জনসাধারণ। সকলের হাতেই রয়েছে এআই অপব্যবহারের সুযোগ। ফলে, তা আটকানো যথেষ্ট মুশকিল। একটা সময় পর কোনটা মানুষের তৈরি শিল্প আর কোনটি এআই-এর, কোনো খবর সত্যি নাকি মিথ্যে— তার তফাৎ করার সুযোগ থাকবে না মানুষের কাছে। পাশাপাশি এআই-এর ব্যবহারে আগামীতে বেকারত্ব বাড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। 

অবশ্য এখানেই শেষ নয়। জেফ্রি আশঙ্কিত এআই-এর বিবর্তন নিয়েও। হিন্টনের কথায়, নিউরাল নেটওয়ার্ক বা মেশিন লার্নিং-এর মাধ্যমে ক্রমশ নিজেকে শিক্ষিত করে তোলে এআই। এখনও পর্যন্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের মস্তিষ্কের সমকক্ষ হয়ে না উঠতে পারলেও, তাড়াতাড়িই মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতাকে ছাপিয়ে যাবে সে। নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে আগামীযুগের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এমনকি আরও শক্তি ও ক্ষমতা অর্জনের জন্য মানুষের সঙ্গে লড়াই-ও শুরু হতে পারে এআই-এর। চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে মানব সভ্যতার টিকে থাকা। 

জেফ্রির এই বর্ণনা যেন হুবহু মিলে যায় ডেস্টোপিয়ান উপন্যাসের প্রেক্ষাপটের সঙ্গে। অনেকেই তাঁর কথা বিশ্বাস করতে নারাজ। আর সেটাই উদ্বিগ্ন করছে প্রযুক্তিজগতের নোবেল, ‘অ্যালান টুরিং’ পুরস্কার-জয়ী গবেষককে। তাঁর কথা যাতে সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে, তার জন্য সম্প্রতি গুগলের চাকরিও ছেড়েছেন ‘এআই-এর গডফাদার’। কিন্তু তাঁর দেওয়া সতর্কবার্তা কি আদৌ সাদরে গ্রহণ করবে সভ্যতা? সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।

Powered by Froala Editor

More From Author See More