বিপদের মুখে ইউনেস্কো-র ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, গোয়া সরকারের সমালোচনায় প্রকৃতিবিদরা

যারা দাক্ষিণাত্যে ঘুরতে গেছেন, তাঁরা পশ্চিমঘাট পর্বতের ঘন সবুজ অরণ্যের দৃশ্য কখনও ভুলতে পারবেন কি? পাহাড়ের গা বেয়ে চলে গেছে ঘন সবুজের সারি, ভেতরে ছুটে বেড়াচ্ছে জানা-অজানা কত প্রাণী! হয়ত ট্রেনও চলে গেল কোনো একটা অংশ দিয়ে। সব মিলিয়ে বেশ মনোরম দৃশ্য। এখানেই ছেদ পড়ার উপক্রম ঘটেছে। পশ্চিমঘাট পর্বতের কোলেই তিন তিনটে বড়ো প্রোজেক্ট তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর তার জন্যই বিপদে পড়েছে সেখানকার জঙ্গলের একটা বড়ো অংশ। তাই নিয়েই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেকে।

গোয়ার প্রশাসন এবং ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগেই এই তিনটে প্রকল্পের রূপদান করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। কী সেই প্রকল্প? প্রথমত, গোয়ায় হসপেট আর ভাস্কো পোর্টের মধ্যে ১২০ বছরের পুরনো একটি রেলপথ রয়েছে, যা পশ্চিমঘাট পর্বতের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গেছে। সেটাকেই ডাবল ট্র্যাকিং করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, আনমোদ থেকে মোল্লেম পর্যন্ত বিস্তৃত জাতীয় সড়ককে (এনএইচ-৪এ) চার লেনের করা হবে। আর তৃতীয়ত, গোয়ার সানগোড থেকে কর্ণাটকের সীমানা পর্যন্ত ১০ কিমি লম্বা পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইন তৈরি করা হবে। 

এ তো গেল তিনটে প্রোজেক্টের কথা। নিঃসন্দেহে তিনটেই বড়ো প্রোজেক্ট। এবং সরকারি হিসেব অনুযায়ী, এতে অনেক সুবিধাও আছে। বহু লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ যেমন তৈরি হবে, তেমনই যাতায়াত ব্যবস্থারও প্রভূত উন্নতি হবে। জাতীয় সড়ক চার লেনের হয়ে গেলে দুর্ঘটনা কমবে; উপরন্তু অনেক জায়গার দূরত্ব কমে আসবে। ফলে তেলের খরচ বাঁচবে। ট্রান্সমিশন লাইন তৈরি হলে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ আসবে। আর রেললাইনকে পুনরায় মেরামত করে ডাবল ট্র্যাকিং করলে, পর্যটনের সুযোগও বাড়বে। খনিজ দ্রব্য নিয়ে যেতেও সুবিধা হবে। 

এসব কথা তো ঠিক আছে। কিন্তু তাসের বিপরীত দিকের কথা তো এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে! এই তিনটে প্রোজেক্টকে যদি বাস্তবে রূপায়ন করা হয়, তাহলে গোয়ায় অন্তত ১৭১ হেক্টর জঙ্গল কাটা পড়বে! ৩৭ হাজারের ওপর গাছ ধ্বংস হবে। সবথেকে বড়ো কথা, পশ্চিমঘাট পর্বতের এই জঙ্গল ইউনেস্কোর অন্যতম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। এখানকার বাস্তুতন্ত্র, জীববৈচিত্র্য বারবার প্রকৃতিবিদদের আকৃষ্ট করেছে। এই তিনটে প্রোজেক্টের জন্য সেসব নষ্ট হয়ে যাবে। ক্ষতির মুখে পড়বে পরিবেশ, সেখানকার বন্যপ্রাণ। যদিও বলা হচ্ছে অ্যানিম্যাল করিডোর তৈরি করা হবে, পরিবেশের কথা ভাবা হচ্ছে; কিন্তু কাজের বেলায় কি সেসব দেখা যাচ্ছে? আর অ্যানিম্যাল করিডোরই কি চূড়ান্ত সমাধান? প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করে দিয়ে জোর করে উন্নয়ন করা কি কাম্য? 

এইসব প্রশ্নই তুলেছেন গোয়া স্টেট ওয়াইল্ড লাইফ বোর্ডের সদস্যরা। ইতিমধ্যেই গোয়ার রাজ্য প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় সরকার এই তিনটে প্রোজেক্টকে সবুজ সংকেত দেখিয়ে দিয়েছে। উল্টোদিকে প্রতিবাদও জোরালো হচ্ছে। এভাবে পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়ন কখনও বরদাস্ত করা যায় না, এমনটাই বলছেন প্রকৃতিবিদরা। আর সরকার? সেই জবাবেরই অপেক্ষায় সবাই। কী হবে পশ্চিমঘাট পর্বতের পরিবেশের ভবিষ্যৎ, জানেন না কেউ… 

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
স্যানচুয়ারিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে ব্ল্যাক প্যান্থার, প্রথমবার এমন দৃশ্যের সাক্ষী থাকল গোয়া