বন্যার সময় খাদ্য জোগাতে গ্রামের লোকেরাই গড়লেন 'ফুড ব্যাঙ্ক'

বেঁচে থাকার জন্য মানুষের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা খাদ্য। অথচ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে প্রতিবছর খাদ্যের অভাবে হাজারো মানুষ মারা যায়৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বহু মানুষের কাছে পৌঁছায় না ত্রাণ। চারিদিকে যেন ক্ষুধার হাহাকার। অথচ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রচুর খাদ্যের অপচয় হয়। জনসংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি কমে আসছে খাদ্যের যোগান। তাই বিপদের সময় যাতে খাদ্যের অভাব না হয়, তার অভাব মেটানোর জন্যই বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জের এক প্রান্তিক নারী ও তার টিম একটি নজিরবিহীন উদ্যোগ নিলেন।

সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় বন্যার সময় ভেসে যায় গ্রামের পর গ্রাম। বহু এলাকাতেই পৌঁছায় না ত্রাণ। তাই সেইসব মানুষদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন কোহিনূর বেগম। তাঁরই উদ্যোগে গ্রামের মানুষেরা মিলে ২০১৮ সালে 'ফুড ব্যাঙ্ক' নামে এক সংগঠন তৈরি করেন। বর্তমানে ফুডব্যাঙ্কের সদস্য সংখ্যা ৪০। প্রত্যেকে তিনমুঠো চাল দিয়ে রোজ তিনবেলা রান্না করেন। মাসে সব মিলিয়ে প্রায় বিশ-ত্রিশ কেজি চাল জোগাড় করেন এঁরা।

বন্যার সময় যাঁরা খাবার জোগাড় করতে পারেন না, তাঁদের ওই চাল দিয়ে সাহায্য করাই ফুড ব্যাঙ্কের একমাত্র উদ্দেশ্য। অথচ এই ফুড ব্যাঙ্কের সদস্যরা কেউ হয়তো দিনমজুর, কেউ চাষী। কোনোক্রমে তাঁদের রোজকার সংসার চলে। কিন্তু মনের দিক থেকে এরা একটুও কার্পণ্য করেন না, তাই যার যতটুকু সম্বল তা থেকেই কিছু কিছু করে চাল দান করে ফুড ব্যাঙ্কে। বন্যায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা চাল দিয়ে আসেন। কারও হয়ত মেয়ের বিয়ে, কিন্তু ঘরে চাল নেই। তৎক্ষণাৎ ফুড ব্যাঙ্ক থেকে চাল নিয়ে গিয়ে সেই বাড়িতে দিয়ে আসা হয়। এমনই নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই 'ফুড ব্যাঙ্ক'।

শুধুমাত্র এই এলাকায় নয়, এদের উদ্দেশ্য অনান্য গ্রামেও একইরকম উদ্যোগ নিয়ে সেখানকার মানুষকে সাহায্য করা। খুব সাধারণ জীবন যাপন করেও যারা এই অসাধারণ চিন্তা ভাবনাকে কার্যে রূপান্তর করেন, তাঁদের সাধুবাদ জানাতেই হয়। অক্ষত থাকুক সিরাজগঞ্জের ফুডব্যাঙ্কের এই লড়াই। বিশ্ব ক্ষুধার নিরিখে তাই এই দেশের নাম একদিন অনেক ওপরে উঠে আসবে বলে বিশ্বাস করা যায়।