হাসপাতালে পরিত্যক্ত শিশুদের অন্নপ্রাশন, আত্মীয়তার বাঁধনে মালদার ডাক্তার-নার্সরাই

কে বলবে ওরা স্বজনহারা, আশ্রয়হীন? ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের হাসিমুখে ঝলমল করে উঠেছিল মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। মামা-মাসি হাসপাতালের ডাক্তার আর নার্সরাই। তারাই ছোটোদের মুখে খাবার তুলে দিল। এক অভিনব অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকল মালদা মেডিক্যাল কলেজ। ১৪ মার্চ এই অনুষ্ঠান প্রমাণ করে দিল, এখনও দেশের বুক থেকে মানবিকতা পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি।

“প্রতি বছরই দু-একজন বাবা-মা তাঁদের সদ্যজাত সন্তানদের এই হাসপাতাল চত্ত্বরে ফেলে রেখে যান। অনেক সময় তাদের বাঁচানোই যায় না। তবে যাদের বাঁচিয়ে রাখা যায়, তাদের প্রতিপালনের প্রাথমিক দায়িত্বটা আমাদের হাসপাতালের কর্মচারীরাই নিয়ে থাকেন।” বলছিলেন মালদা মেডিক্যাল কলেজের সুপারেনটেনডেন্ট ডঃ পীযুষ সাহা। বিগত ৫ বছর ধরে হাসপাতালে এই অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছেন কর্মচারীরা। মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই অনুষ্ঠানের দিন গোটা হাসপাতাল মেতে ওঠে এক অন্য রকমের খুশিতে।

“গতবছরের অনুষ্ঠানের ঠিক পরেই লকডাউন শুরু হয়ে যায়। এবছর করোনা আবহে আদৌ অনুষ্ঠান সম্ভব হবে কিনা, তাই নিয়ে দুঃশ্চিন্তা ছিলই। তবে শেষ পর্যন্ত ভ্যাকসিন এসে যাওয়ায় নিরাপদেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা গিয়েছে।” বললেন ডেপুটি সুপার ডঃ ইসমাইল শেখ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের সমস্ত ডাক্তার, নার্স এবং কর্মচারীরাও। সঙ্গে ছিলেন মালদা ‘চাইল্ডলাইন’ সংস্থার কর্মীরা। চাইল্ডলাইনের আধিকারিক রচনা সামন্ত বললেন, “মা-বাবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও যে এরা পুরোপুরি অনাথ হয়ে যায়নি, বরং একটা বড়ো পরিবারের অংশ হয়ে উঠেছে, সেটাই সবচেয়ে আনন্দের বিষয়।”

তবে হাসপাতালের ব্যস্ত পরিবেশে খুব বেশিদিন রাখা যায় না শিশুদের। সরকারের তেমন অনুমতি নেই। কিছুদিনের মধ্যেই সরকারি হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয় শিশুদের। আর তার আগেই তাদ্দের অন্নপ্রাসন আর নামকরণের অনুষ্ঠান হয়ে যায়। কোনো বছর দুজন শিশু, কোনো বছর একজন। এবছর তিনজন শিশুর মুখে ভাত তুলে দেওয়া হয়েছে। এই পৃথিবীতে জন্ম থেকেই তারা একা। কিন্তু জীবনের প্রতিটা সময়ে তাদের সমস্যায় মালদা মেডিক্যাল কলেজ পাশে থাকার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। এমনটাই বলছেন হাসপাতালের আধিকারিক থেকে কর্মচারী সকলেই।

Powered by Froala Editor

More From Author See More