প্রয়াত ভারতের নারীবাদী আন্দোলনের অন্যতম মুখ কমলা ভাসিন

নারীবাদ মানে পুরুষ ও নারীর সংঘাত নয়। বরং পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নামই নারীবাদ। ভারতের মাটিতে এই বক্তব্যের সবচেয়ে বড়ো প্রচারক ছিলেন কমলা ভাসিন (Kamala Bhasin)। একাধারে নারী আন্দোলনের পুরোধা, সমাজকর্মী, সাহিত্যিক, নাট্যকর্মী কমলা গত রাত ৩টে নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। সামাজিক মাধ্যমে কমলার মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত করেছেন তাঁর বন্ধু তথা সহকর্মী কবিতা শ্রীবাস্তব। জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই নানারকম শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। কয়েকমাস আগে তাঁর ক্যানসারও ধরা পরে।

১৯৪৬ সালে পাঞ্জাব প্রদেশের গুজরাট জেলায় জন্ম কমলা ভাসিনের। দেশভাগের পর সেই অঞ্চল পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। সীমানা পেরিয়ে চলে আসতে হয় কমলার পরিবারকে। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১ বছর। কমলা তাই নিজেকে বারবার ‘মিডনাইট চিলড্রেন’ বলে উল্লেখ করেছেন। রাজস্থানে বসবাস শুরু করে কমলার পরিবার। এখানে চিকিৎসক হিসাবে কাজ শুরু করেন তাঁর বাবা। তিনি নিজেও প্রত্যেক ছেলেমেয়েকে সমানভাবে বড়ো করে তুলতে চেয়েছিলেন। তাই কমলার পড়াশোনায় উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন বরাবর। আর সেইসঙ্গে তাঁর আত্মনির্ভর ও স্বাধীনতাকামী মানসিকতা তৈরিতেও সাহায্য করে গিয়েছেন। রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর উচ্চশিক্ষার জন্য কমলা পাড়ি দেন জার্মানি। সেখানে ডেভালাপমেন্ট সোসিওলজি নিয়ে পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গেই নানারকম সামাজিক কাজের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। ডেভালাপমেন্ট ফেমিনিজমের সঙ্গে পরিচয়ও সেখানেই।

জার্মানিতে থাকার সময়েই জাতিপুঞ্জের একাধিক প্রকল্পের সঙ্গে কাজ শুরু করেন কমলা। দেশে ফিরে এসেও সেই কাজ বন্ধ হয়নি। বরং রাজস্থান সেবামন্দিরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গ্রামাঞ্চলের মহিলাদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজ শুরু করেন তিনি। সেখানকার মহিলাদের সঙ্গে যোগাযোগের সেতু হিসাবেই বেছে নিয়েছিলেন সাহিত্যের ভাষাকে। কবিতা, নাটক ছাড়াও লিখেছেন অসংখ্য তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক বই। পৃথিবীর নানা দেশের মোট ৩০টির বেশি ভাষায় অনুদিত হয়েছে সেইসব বই। ৭০-এর দশক থেকেই একটু একটু করে দেশে নারীবাদী আন্দোলনের বীজ বপন করেছেন কমলা। ২০০২ সালে জাতিপুঞ্জের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে তৈরি করেছেন নিজের সংগঠন ‘সঙ্গত’। তথাকথিত পিছিয়ে থাকা মহিলাদের নিয়েই শুরু হয় সমাজ গঠনের কাজ।

ভারত তো বটেই, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার নারীবাদী আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন কমলা ভাসিন। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সারা দেশ।

Powered by Froala Editor

More From Author See More