ভুয়ো খবর ছড়িয়ে ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা, কলকাতা পুলিশের চেষ্টায় কাটল রহস্য

টিভি হোক বা ফোন, সবসময় আমাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে যাবতীয় খবর। শহর, জেলা— কোথায় কী হচ্ছে না হচ্ছে, এক লহমায় জেনে যাচ্ছি সবাই। দ্রুত ছড়িয়েও পড়ছে সেসব। কিন্তু যা খবর পাই আমরা, তার সবগুলোই কি সত্যি? দীর্ঘদিন ধরে এই প্রশ্নটাই তুলে আনছেন বেশ কিছু সাংবাদিক ও সমাজকর্মী। খুব সম্প্রতি সেরকম ‘ফেক নিউজ’-এর আরও একটি কদর্য উদাহরণ দেখল শহর কলকাতা।

ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার দুপুর থেকে। অনেকের হোয়াটসঅ্যাপেই পৌঁছে যায় একটি খবর। রাজাবাজারের একটি মাদ্রাসা থেকে ৬৩ জন শিশুদের উদ্ধার করে পুলিশ। শুধু শিশুই নয়, পাওয়া গেছে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র, বন্দুক, কার্তুজ। সেখানে নাকি ‘উগ্রপন্থী’দের ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছিল। খবরের সঙ্গে ঘুরতে থাকে ছবি, ভিডিও। স্বাভাবিকভাবেই নড়ে চড়ে বসে অনেকে। বেশ অনেকক্ষণ পর, খবরটি সম্পর্কে খোঁজ নিতে শুরু করেন অনেকে। সেই মুহূর্তেই বেরিয়ে আসে আসল সত্যি।

শিশু উদ্ধারের যে খবরটি রাজাবাজারের বলে ‘প্রচার’ করা হচ্ছে, সেটি আসলে ২০১৫-এর আগস্টের একটি ঘটনা। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ভিন রাজ্যের কিছু শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ। কোনো পরিচয়পত্র না থাকায় প্রাথমিকভাবে আটক করে পুলিশ। ওই শিশুদের বাড়ি বিহারের পূর্ণিয়া জেলায়। সেই ঘটনাই ‘রাজাবাজারের’ বলে ছড়ানো হচ্ছে।

অস্ত্র ও বন্দুকের ছবি, ভিডিওটিও ফেক! ২০১৯-এর উত্তরপ্রদেশের শেরকোট থানা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় এই অস্ত্র। এমনকি, তখন টুইটও করেন সেখানকার পুলিশ। বন্দুকের ছবিও অন্য একটি ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া। সব মিলিয়ে এই মিথ্যে খবরটিকে ‘যত্ন’ নিয়ে সাজানো হয়েছিল।

ঘটনাচক্রে, রাজাবাজারে এখন শাহিনা জাভেদের নেতৃত্বে চলছে অবস্থান বিক্ষোভ। সংবিধান রক্ষার জন্য, দেশের সাম্প্রতিক আর্থসামাজিক পরিস্থিতির প্রতিবাদের জন্য এই অবস্থান। শাহিনা জাভেদও বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নেন। কিন্তু এমন কোনো ঘটনার খবর শোনা যায়নি। পুরো ব্যাপারটিই মিথ্যা প্রচার। শিশু সুরক্ষা কমিশনের তৎপরতায় ও কলকাতা পুলিশের হস্তক্ষেপে এই ভুয়ো খবরের পর্দা ফাঁস হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে রাজনীতির পাশাপাশি ধর্মীয় মেরুকরণের সাজানো ঘটনা ছড়ানোর বিস্তর উদাহরণ আমরা দেখে এসেছি কয়েক বছরে। দ্রুত সমস্ত জায়গায় ছড়িয়েও পড়ে এসব। এভাবেই কি তাহলে বিভেদ সৃষ্টির খেলায় মেতেছে একটি শ্রেণী? এই মুহূর্তে দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি একটি বিশেষ জায়গায় আছে। এরকম প্রেক্ষাপটে, এমন ভুয়ো খবর কি ইঙ্গিত দিচ্ছে? এমন অবস্থায়, সবাইকে সতর্ক ও সাবধান থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি আমরা। এমন ভুয়ো খবর যাতে আমাদের চারপাশে না ছড়ায়, যাতে কোনোরকম সমস্যার সৃষ্টি না হয়, সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের সবার। খবর সত্যি কিনা, সেটাও যাচাই করে নেওয়া সবার আগে দরকার। তাই, সবাই সতর্ক থাকুন…