মানুষের মতোই ‘চাষাবাদে’ অভ্যস্ত এই স্তন্যপায়ী! চাঞ্চল্যকর তথ্য জানাল গবেষণা

আজ থেকে প্রায় ১০ হাজার বছর আগের কথা। খাদ্যের প্রয়োজন মেটাতে এবং বনজ সম্পদ ও শিকারের ওপর নির্ভরতা কমাতে প্রথম চাষাবাদ শুরু করেছিল মানুষ। কৃত্রিমভাবে খাদ্য উৎপাদনের এই কৃতিত্ব এতদিন পর্যন্ত ছিল কেবল মানুষের ঝুলিতেই। এবার তাতে ভাগ বসাল আরও একটি স্তন্যপায়ী (Mammal)। হ্যাঁ, সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এল এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। মানুষ ছাড়াও কৃষিকাজ জানে ভিন্ন একটি প্রাণী। 

পকেট গোফার (Pocket Goffer) বা জিওমিস পিনেটিস। ইঁদুর গোত্রের এই প্রাণীটি রীতিমতো কৃষিকাজে অভ্যস্ত। ‘ফসল’ উৎপাদনের জন্য বেশ ভালোরকম পরিশ্রমও করে গোফাররা। এমনটাই জানাচ্ছেন,  ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তবে এই আবিষ্কার এক-কথায় আকস্মিকভাবেই। মূলত এই প্রাণীটির আচরণ অন্যান্য মূষিক গোত্রের প্রাণীদের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন। একদিকে যেমন তারা মানুষের উপস্থিতি পছন্দ করে না, উৎপাত করে না কৃষিক্ষেত্রে; তেমনই অন্যান্য ছোটো প্রাণী শিকার করেও খাদ্যের চাহিদা মেটায় না বললেই চলে। তাছাড়া জীবনের অধিকাংশ সময়টাই তারা কাটায় মাটির নিচে তৈরি করা সুড়ঙ্গে। গোফারদের এই অদ্ভুত যাপনের রহস্য উদ্ঘাটন করেই মূল উদ্দেশ্য ছিল গবেষকদের। আর সেটার অনুসন্ধানে নেমেই বেশ চমকে যান গবেষকরা। 

মাটির নিচে বসবাসের জন্য দীর্ঘ টানেল তৈরি করে গোফাররা। যার এক-একটির প্রায় ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। অনেকটা মেট্রো রেলের মতো মাটির নিচে এ-ধরনের টানেলের নেটওয়ার্ক তৈরি করে গোফার। কিন্তু দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পর গবেষকের নজর কাড়ে একটি বিশেষ বিষয়। আদতে এই টানেলগুলির মধ্যেও প্রকারভেদ আছে। কিছু টানেলে শুধুমাত্র রাত্রিবাস করে এই প্রাণীগুলি। অন্যগুলি ব্যবহৃত হয় শুধুমাত্র খাদ্যের যোগান বজায় রাখতে। 

মূলত পাম গাছের শিকড়কে কেন্দ্র করেই এই টানেলগুলি নির্মাণ করে গোফাররা। ঘাস ছাড়া এই শিকড়ই নিরামিষাশী গোফারদের অন্যতম খাদ্য। পাম গাছের মূলই তাদের ৬০ শতাংশ খাদ্যের যোগান দেয় বলেই অভিমত গবেষকদের। প্রশ্ন উঠতে পারে, গাছের শিকড়কে কেন্দ্র করে শুধু টানেল তৈরি করলেই কি তাকে কৃষিকাজ বলা চলে? 

না, শুধু টানেল তৈরির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই তাদের কর্মকাণ্ড। এইসব শিকড়কে অন্যান্য পোকা-মাকড়দের থেকে রক্ষা করতে যথেষ্ট পরিশ্রম করে গোফাররা। সারাদিন ধরে টানেলে টানেলে টহল চলে তাদের। পাশাপাশি পুরো শিকড়কে একবারে খেয়ে ফেলে না গফাররা। আংশিকভাবে খেয়ে রেখে দেয় সেগুলিকে। শিকড়গুলি যাতে পুনরায় বৃদ্ধি পেতে পারে, তার জন্যই এই বন্দোবস্ত। তবে গবেষকদের সবচেয়ে বেশি অবাক করে অন্য একটি বিষয়। এই আধ-খাওয়া শিকড়গুলির গোড়াতেই মূলত মল-মূত্র ত্যাগ করে গোফাররা। তা স্বভাববশত নয়। মল-মূত্র যে সারের কাজ করে, তা গাছের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে তা ভালোরকমই জানা আছে তাদের। 

এতদিন পর্যন্ত পিঁপড়ে, গুবরে পোকা এবং কয়েকটি উই প্রজাতির মধ্যে কৃষিকাজের উদাহরণ খুঁজে পেয়েছিলেন গবেষকরা। তবে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো স্তন্যপায়ীদের মধ্যে এর আগে দেখা যায়নি এমন ঘটনা। সম্প্রতি ‘কারেন্ট বায়োলজি’ বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্র। এই গবেষণা আরও একবার তুলে ধরল প্রাণীজগতের রহস্যময় বৈচিত্রকে…

Powered by Froala Editor