চাঁদের মাটিতে মিশে আছে যে বিজ্ঞানীর অস্থিভস্ম

নশ্বর দেহে চাঁদে যাবার ইচ্ছে ছিল, হয়ে ওঠেনি। তবে মৃত্যুর পর তাঁর অস্থি মিশে গেছে চাঁদের মাটিতে। তাঁর নাম ইউজিন শুমেকার। ছিলেন মার্কিন ভূতাত্ত্বিক। তাঁর বিস্তৃত গবেষণা জন্ম দিয়েছিল বিজ্ঞানের নতুন শাখা ‘প্ল্যানেটরি সায়েন্স’ বা ‘প্ল্যানেটোলজি’।   

ইউজিনের জন্ম ১৯২৮ সালের ২৮ এপ্রিল ক্যালিফোর্নিয়ায়। বাবা, জর্জ শুমেকার জীবনে কখনও কৃষিকাজ, কখনও শিক্ষকতা, কখনও ব্যবসা, নানা ভাবে উপার্জন করেছেন। মা, মারিয়েল ছিলেন শিক্ষিকা।  ইউজিন বিয়ে করেন ক্যারোলিনকে। বিয়ের পরে সংসার এবং তিন সন্তান নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন ক্যারোলিন। কিন্তু সন্তানরা বড় হবার পরে স্বামীর পরামর্শে অ্যাস্ট্রোনমি নিয়ে পড়াশোনা করেন। কঠোর অধ্যবসায়ের জেরে একান্ন বছর বয়সে ক্যারোলিন প্ল্যানেটরি অ্যাস্ট্রোনমার হিসেবে পরিচিত হন।

ইউজিন ও ক্যারোলিনের যৌথ গবেষণায় আবিষ্কৃত হয়েছিল ৭১টি ধূমকেতু এবং ৮০০ গ্রহাণু যা নজিরবিহীন। স্ত্রী ক্যারোলিনের সঙ্গে গবেষণায় ১৯৯৩ সালে একটি ধূমকেতু আবিষ্কার করেন ইউজিন যার নাম দেন শুমেকার লেভি-৯। ইউজিন শুমেকারের পূর্বাভাস ছিল, এই ধূমকেতু খুব তাড়াতাড়ি আছড়ে পড়বে বৃহস্পতি গ্রহে যা সত্যি প্রমাণিত হয় ১৯৯৪ সালের ১৬ জুলাই। 

পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা ধরনের গহ্বর ছিল ইউজিনের গবেষণার বিষয়। গহ্বর নিয়ে তাঁর সেই অনুসন্ধান বজায় ছিল মৃত্যুর শেষ দিন অবধি।

নাসার অ্যাপোলো-১১ মিশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ইউজিন। প্রশিক্ষক ছিলেন হবু মহাকাশচারীদের। চাঁদে প্রথম মানুষ পৌঁছনোর অভিযানে তিনিই ছিলেন সম্ভাব্য অভিযাত্রী। সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গিয়েছিল অ্যাডিসন রোগে। অ্যাড্রিনালিন গ্রন্থির এই অসুখ তাঁকে অনুমতি দেয়নি চাঁদকে ছুঁয়ে দেখার। তাই ১৯৬৯-এর ২০ জুলাই নাসা-র কার্যালয়ে বসে বাইরে থেকেই চাঁদের পিঠে মানুষের প্রথম পদচারণা দেখেছিলেন ইউজিন শুমেকার।  

১৯৯৭-এর জুলাই মাসে তিনি সস্ত্রীক পৌঁছেছিলেন পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যন্ত প্রান্ত ট্যানামি ট্র্যাকে উল্কাপিণ্ডের আঘাতে তৈরি হওয়া নতুন গহ্বরের সন্ধানে। সেখানেই গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত্যু হয় ইউজিনের। তাঁর স্ত্রীর সিদ্ধান্তে, ১৯৯৮ সালে চাঁদের উদ্দেশে রওনা হওয়া নাসা-র লুনার প্রসপেক্টর একটি পলি কার্বোনেটের ক্যাপসুলে পিতলের আধারে রাখে ইউজিনের অস্থিভস্ম। নাম, জন্ম ও মৃ্ত্যুতারিখ এবং ‘রোমিও জুলিয়েট’- এর একটি অংশ সেই ক্যাপসুলে লেখা ছিল।

১৯৯৯ সালের ৩১ জুলাই চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে একটি গহ্বরে ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করানো হয় ‘লুনার প্রসপেক্টর’-কে। আঘাতের তীব্রতায় খণ্ডিত প্রসপেক্টর থেকে বেরিয়ে আসে ক্যাপসুল। চাঁদের মাটিতে মিশে যায় ইউজিনের অস্থিভস্ম, তাঁর উপস্থিতি।