মৃত্যুর ৩০০০ বছর পর তৈরি পাসপোর্ট, মিশর থেকে ফ্রান্সে গেলেন ‘ফ্যারাও’

পরিচয়, একজন পুরুষ। আরও ভালোভাবে বলতে গেলে, একজন রাজা। তাহলে তো বেশ সম্মানীয় অতিথি। কোথাকার রাজা? মিশরের। বয়স কত? এর উত্তরে খানিক খটকা লাগল বিমানবন্দরের কর্মীর। ওই রাজার বয়স প্রায় তিন হাজার বছর! আরও অবাক হয়ে দেখল, রাজা হিসেবে যাকে বলা হচ্ছে, তিনি আসলে একটি কফিনে বন্দি। এবার পাসপোর্টে ছবিটা দেখা গেল। এ যে মমি! হ্যাঁ, এভাবেই রীতিমতো পাসপোর্ট ইস্যু করিয়ে, নিয়মকানুন মেনে প্লেনে তোলা হয় প্রাচীন মিশরের ফ্যারাও দ্বিতীয় রামেসিস’কে। হাজার হোক, সম্রাট বলে কথা!

আরও পড়ুন
মৃত্যুর ৪৬৭ বছর পরেও দেহ প্রায় অবিকৃত, গোয়ায় শায়িত এই ‘অলৌকিক’ খ্রিস্টান সাধু

মিশরের ইতিহাসে দ্বিতীয় রামেসিস বেশ উঁচু স্থানেই রয়েছেন। মিশরীয়দের কাছে তাঁর পরিচয় ছিল ‘গ্রেট অ্যানসেস্টর’ হিসেবে। খ্রিস্টপূর্বাব্দ ১২৭৯ থেকে ১২১৩ এই দীর্ঘ বছর তিনি সিংহাসনে ছিলেন। তৈরি করেছিলেন মন্দির, শহর। প্রজাদের কাছেও সম্মানীয় ছিলেন তিনি। কাজেই তাঁর মমি যখন ঐতিহাসিকদের হাতে এল, তখন সবাই খুশি হয়েছিলেন। এ যে ইতিহাসের দলিল!

আরও পড়ুন
৩০০০ বছরের পুরনো মমি থেকে উদ্ধার কণ্ঠস্বর, চমক বিজ্ঞানীদের

কিন্তু উদ্ধার হওয়া মমিটির অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। সেটাকে যে করেই হোক পুনরুদ্ধার করতেই হবে। ‘স্বাস্থ্য’ ফেরাতে হবে তিন হাজার বছর পুরনো মৃতদেহের! ফ্রান্সের এক ডাক্তার মরিস বুশেল দ্বিতীয় রামেসিস’কে ফ্রান্সে নিয়ে আসতে বলেন। দুই দেশের মধ্যে চলে কথাবার্তা। ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে এই কাজে রাজি হয় ইজিপ্ট। সালটা ১৯৭৬। ফ্যারাও দ্বিতীয় রামেসিসকে নিয়ে বিমান পাড়ি দিল ফ্রান্সে। তার আগে অবশ্য নিয়ম মেনে তৈরি হয় পাসপোর্ট। বিশ্বের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ফ্যারাওয়ের জন্য পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। জীবিকা হিসেবে লেখা ছিল ‘রাজা, কিন্তু মৃত’। ফ্রান্সের মুশেঁ ডে হোম্মে’র ল্যাবে ফ্যারাওয়ের ‘শুশ্রূষা’ চলে। হাজার হোক, তিনি যে ফ্যারাও! এই সম্মান কি তাঁর প্রাপ্য নয়?