আতঙ্কের দিনগুলিতে, চিকিৎসকদের পাশে এসে দাঁড়াল একটি কুকুরও

চতুষ্পদ প্রাণীটি ডাক্তার নয়। কোনোরকম ডাক্তারি সার্টিফিকেট তার নেই। আপাতভাবে তাকে সামান্য একটি কুকুর বলেই মনে হয়। তবে হাসপাতালের ডাক্তারদের সঙ্গে যে তার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। লোকি নামের এই কুকুরের মালিক ক্যারোলিন বেঞ্জেল মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী। সেই সূত্রেই প্রায়ই হাসপাতালে যেত সে। হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে তার বন্ধুত্বও গড়ে ওঠে এভাবেই। আর বিপদের সময় বন্ধুর পাশে দাঁড়ানো তো প্রত্যেকেরই কর্তব্য। তাই করোনার বিরুদ্ধে যখন প্রতি মুহূর্তে লড়াই জারি রেখেছেন তার বন্ধু ‘মানুষ’রা, লোকিও এগিয়ে এল সেই যুদ্ধের শরিক হয়ে।

লোকি তো ডাক্তার নয়, সামান্য একজন কুকুর সে। তবে বেনজেল তার নাম রেখেছেন 'ডগটর'। এই নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছে সে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেই ঘরের মধ্যে না থেকে মাঝে মাঝেই ছুটে গিয়েছে হাসপাতালে তার বন্ধুদের কাছে। দেখেছে, তাঁরা সবসময় মাস্ক, গ্লাভস আর অন্যান্য সুরক্ষা পোশাক পরে কাজ করে যাচ্ছেন রাতদিন। লোকি আর বেনজেল লক্ষ করে দেখেছে এইসব পোশাকের জন্যই স্বাস্থ্যকর্মীদের গায়ে নানারকম র্যা শ বেরোতে শুরু করেছে। ত্বকের নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁরা।

মহামারীর মধ্যে এসব ছোটোখাটো দিকে তাকানোর মতো সময় নেই ডাক্তারদের। তাই ডগটর তার কাজ শুরু করলো। তাদের সুরক্ষার জন্য নিয়ে এল নিজের 'হিরো হিলিং কিট'। একটি বাক্সের মধ্যে করে স্কিন লোশন, ময়েশ্চারাইজার, টি ব্যাগ তুলে দিল স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে। আর এই ডগটরের কাজে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অনেক মানুষও। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে পৌঁছে দিচ্ছেন অর্থসাহায্য। এভাবে এখনও অবধি প্রায় ১৪০০ স্বাস্থ্যকর্মীর হাতে কিট তুলে দিতে পেরেছে লোকি।

মহামারীর মধ্যে ছোটোখাটো স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভুলে গিয়ে দিনরাত মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন ডাক্তার, নার্সরা। কিন্তু তাঁদের জন্য সাধারণ মানুষের এগিয়ে আসার দায়িত্বও তো থেকে যায় সমানভাবেই। এভাবেই তো হাতে হাত রেখে পেরিয়ে যেতে হবে দুঃসময়। তাই আমেরিকার এই ডাক্তারি ছাত্রীর উদ্যোগ রীতিমতো প্রশংসা পেয়েছে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে। বেনজেল অবশ্য মনে করেন, এতে প্রশংসার কিছু নেই। বরং সমস্ত দেশের মানুষ যদি ডাক্তার নার্সদের দিকে তাঁদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলেই পৃথিবীর ছবিটা অনেকটা বদলে যাবে। করোনার দিনগুলোতেও তৈরি হবে এক ভালোবসার রূপকথা।