আমফান দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে ডাক্তারির পেশায় ফিরলেন পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়

তাঁকে ক্যামেরার পেছনে থেকে নির্দেশ দিতে দেখতেই অভ্যস্ত আমরা। কখনও কখনও ক্যামেরার সামনেও এসেছেন। এবার অবশ্য সেসব কিছু নয়। লাইট-সাউন্ড-অ্যাকশনের বাইরে বেরিয়ে এসে তিনি হাতে তুলে নিলেন স্টেথোস্কোপ। প্রায় ১৪ বছর বাদে আবারও ডাক্তারের আসনে ফিরলেন পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। তবে এই ‘ফিরে আসা’র পেছনে রয়েছে আমফান-বিধ্বস্ত বাংলা ও সাধারণ মানুষ। 

‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘চাঁদের পাহাড়’, ‘ক্ষত’ আসার আগেও কমলেশ্বর ছিলেন একজন ডাক্তার। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এই প্রাক্তনী পরবর্তীকালে থিয়েটার, সিনেমার নেশায় সেই কাজ ছেড়ে চলে আসেন এখানে। তারপর এখন আবার রোগগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিলেন তিনি। সুপার সাইক্লোন আমফান প্রায় ভগ্নস্তূপে পরিণত করেছে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে। সুন্দরবন তো বটেই, সেই সংলগ্ন অন্যান্য অঞ্চল এখনও ক্ষতিগ্রস্ত। সেখানেই বিনামূল্যে স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করেছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফেডারেশন, শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ, রাসবিহারী শৈলুষিক-সহ বেশ কিছু সংগঠন। সেই সমবেত উদ্যোগেই সামিল হয়েছিলেন কমলেশ্বর। দক্ষিণবঙ্গের আমফান-বিধ্বস্ত গ্রামে গিয়ে সেখানকার অসহায় মানুষগুলোর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অংশ নিলেন তিনিও। 

কথাপ্রসঙ্গে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় প্রহরকে বলছিলেন, “এই মুহূর্তে যা অবস্থা, তাতে যে যেভাবে পারছে সাহায্য করছে। সেই সূত্রেই এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া। যেহেতু একটা সময় ডাক্তারি পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, পড়াশোনাও এটা নিয়ে, তাই যুক্ত হয়েছিলাম। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও এই কাজে এগিয়ে এসেছে। এখনও অবধি এদের প্রায় ৩৫টি ক্যাম্প হয়েছে। আমি কয়েকটাতেই গেছি। সেখানে আমিই ডাক্তার, আমিই কম্পাউন্ডার, আমিই আবার লাইন সামলাচ্ছি। যেভাবে যতটুকু পেরেছি সাহায্য করার চেষ্টা করেছি।”

ওখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানালেন কমলেশ্বরবাবু- “প্রথমত অনেকের পক্ষ থেকে ত্রাণ ওখানে পৌঁছচ্ছে। এটা অত্যন্ত ভালো খবর। তবে মূল একটি সমস্যা হল, বাঁধ ভেঙে গিয়ে সমুদ্রের নোনা জল প্রচুর পরিমাণে ঢুকেছে। ফলে শস্য, মাছের ব্যবসার প্রচুর ক্ষতি করেছে। এছাড়াও ঘর বাড়ি প্রচুর ভেঙেছে। খাবারেরও অভাব। তার মধ্যে যতটা পারা যায় সাহায্য করার চেষ্টা করছি সবাই। তবে একটা ব্যাপার এখানে উল্লেখ করে রাখা ভালো, জ্বর কিন্তু ওখানে খুব বেশি আসেনি। কোভিড-১৯’র যে ভয়টা আমরা পাচ্ছিলাম সেটার প্রকোপ অতটা নেই। কিন্তু অন্যান্য বেশ কিছু সমস্যা আছে। যেমন, ম্যালনিউট্রিশন বা অপুষ্টিজনিত রোগ। সঙ্গে রয়েছে ত্বকের সমস্যা, পেট ব্যথা। এখন ওখানে যা পরিস্থিতি, তাতে ভালো, পরিচ্ছন্ন জল পাওয়াটা মুশকিল। হয়ত দিন কয়েক পর থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়তে পারে ওইসব জায়গায়। সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েই যতটা কাজ করা যায়।”

আরও পড়ুন
কিউবার ডাক্তারদের নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব ইতালির

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
নাগাল্যান্ড থেকে বাংলায় চিকিৎসা করতে আসা ডাক্তারকে আক্রমণ, বন্ধুর পাশে দাঁড়ালেন বাড়িওয়ালা

More From Author See More