বস্তিবাসী শিশুদের শিক্ষকের ভূমিকায় পুলিশ অফিসার

লালকেল্লার পার্কিং স্লটের মধ্যে ছোট্ট একটি ফাঁকা জায়গা। খোলা আকাশের নিচে অবস্থিত সেই এক টুকরো জমিকে বদলে ফেলা হয়েছে ক্লাসরুমে। জড়ো হয়েছে গুটিকয়েক শিশু। মাটিতে ত্রিপলের বিছিয়ে তাদের বসার জায়গা। অন্যদিকে দেওয়ালে টাঙানো হোয়াইট-বোর্ডে তাদের ক্লাস নিচ্ছেন খাকি পোশাক পরিহিত এক ভদ্রলোক।

হ্যাঁ, পেশাগতভাবে তিনি পুলিশ, শিক্ষক নন মোটেই। তবে দিল্লির বস্তিবাসী হতদরিদ্র শিশুদেরকে শিক্ষার আলোয় নিয়ে আসতে একক উদ্যোগেই এই ক্লাসের আয়োজন করেছেন তিনি। শিক্ষকের বাইরে হয়ে উঠেছেন কচিকাঁচাদের বন্ধুও। 

থান সিং (Than Singh)। দিল্লির এই পুলিশ অফিসারের আশ্চর্য উদ্যোগের নেপথ্যে লুকিয়ে রয়েছে এক দীর্ঘ কাহিনি। রাজস্থানের ভরতপুরের এক হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম থান সিং-এর। তারপর দিল্লিতে চলে আসা বাবা-মায়ের সঙ্গে। লালকেল্লার কাছেই ছোট্ট দোকানে জামা-কাপড় ইস্ত্রি করতেন তাঁর বাবা। তাতে কি চার জনের সংসার চলে? ফলে পেট চালাতে কৈশোর থেকেই কাজের সন্ধানে পথে নামতে হয়েছিল তাঁকে। বোনের সঙ্গে জুটি বেঁধে তিনি ভুট্টা বিক্রি করতেন পথে পথে।

অবশ্য এসবের মধ্যেও পড়াশোনার গুরুত্বকে ভুলে যাননি কখনও। তার কারণও খুব স্পষ্ট। শৈশবে বাবার কাছে বার বার শুনতেন, তাঁর ইচ্ছা ছিল একদিন পুলিশ অফিসার হবেন। কিন্তু সেই সুযোগ মেলেনি কোনোদিন। বাবার সেই স্বপ্নপূরণের দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নেন থান সিং। একরকম জেদ চেপে গিয়েছিল মনের মধ্যে। নিয়মিত স্কুলে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে সেখান থেকেই। পরবর্তীতে দিল্লির পথে পথে ভুট্টা বিক্রি করেই জুটিয়েছেন উচ্চশিক্ষার খরচ। সরকারি চাকরির পরীক্ষায় পাশ করে হয়েছেন পুলিশ।

থানের কথা ‘পুলিশ’ শব্দটির অর্থই হল সমাজকর্মী। সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রয়েছে পুলিশদের কাঁধে। আর সেই কারণেই নিজের উপার্জন নিশ্চিত করার পর, বস্তির দরিদ্র শিশুদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি। না-হলে দারিদ্র তাদের টেনে নিয়ে যেতে পারে ভুল পথে। বস্তিতে থাকার সময় সেই ছবি সামনে থেকেই যে প্রত্যক্ষ করেছিলেন তিনি। 

বিগত কয়েক বছরে সবমিলিয়ে প্রায় কয়েকশো শিশু সহায়তা পেয়েছে তাঁর। শুধু গত বছরই তাঁর ‘পাঠশালা’ থেকে সরকারি স্কুলে ভর্তি হয়েছে ৭০ জন শিক্ষার্থী। তাদের ইউনিফর্ম, বই-খাতার খরচও জোগান থান সিং-ই। এদের মধ্যে ১০ জন বিভিন্ন স্কুলে প্রথমও হয়েছে পরীক্ষায়। বলার অপেক্ষা থাকে না, থানের এই ব্যতিক্রমী লড়াই শক্ত করছে সমাজের ভিত। 

Powered by Froala Editor