মুখ্যমন্ত্রী নন, সরকারের 'প্রধান' লেফট্যানেন্ট গভর্নরই; দিল্লিকে গ্রাস কেন্দ্রের?

একদিকে করোনা অতিমারীর দ্বিতীয় তরঙ্গে বিপর্যস্ত রাজধানী নয়া দিল্লি। শুধুই রাজধানী শহরে নয়, সারা রাজ্য জুড়ে অক্সিজেনের অভাব বারবার উঠে আসছে সংবাদের শিরোনামে। ঠিক এই সময় দিল্লির সরকারি ব্যবস্থায় ঘটে গেল এক বিরাট পরিবর্তন। বহু বিতর্কিত ‘দ্য গভর্নমেন্ট অফ ন্যাশানাল ক্যাপিটাল টেরিটরি অফ ইন্ডিয়া’ সংশোধনী আইন- ২০২১ এর ভিত্তিতে দিল্লিতে নিযুক্ত হলেন লেফট্যানেন্ট গভর্নর। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী ২৭ এপ্রিল থেকে সরকার পরিচালনার যাবতীয় ক্ষমতা চলে গেল লেফট্যানেন্ট গভর্নর অনিল বৈজলের হাতে। কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসাবেই তিনি সমস্তকিছু পরিচালনা করবেন।

রাজধানী সরকার সংশোধনী আইনের প্রস্তাব আনার পরেই দিল্লি সরকার অভিযোগ তুলেছিল, কার্যত বিধানসভাকে নিষ্ক্রিয় করে দিল্লিকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে চায় কেন্দ্র। এমনকি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল মামলা। অবশেষে গত মাসেই পার্লামেন্টের দুই ভবনেই ব্যাপক বিরোধিতা সত্ত্বেও পাশ হয়ে যায় এই আইন। আর তার প্রেক্ষিতেই এবার অনিল বৈজলকে দিল্লির লেফট্যানেন্ট গভর্নর নিযুক্ত করল কেন্দ্র।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী ২৭ এপ্রিলের পর যে কোনো বিষয়ে আইনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দিল্লি সরকারকে লেফট্যানেন্ট গভর্নরের অনুমতি নিতে হবে। এই নির্দেশের ফলে কার্যত নির্বাচিত সরকারকে অকেজো করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। গতমাসে যখন পার্লামেন্টে এই আইন পাশ হল, তখনই এই ঘটনাকে ভাররতীয় গণতন্ত্রের এক ‘কালো অধ্যায়’ বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ মেনে নিয়েই কাজ চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

২০১৮ সালে এই সংশোধনী আইন নিয়ে মামলা শুরু হয় সুপ্রিম কোর্টে। পাঁচ বিচারকের বিশেষ বেঞ্চের নির্দেশে সংশোধনীর বেশ কিছু ধারায় পরিবর্তনও আনা হয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বিধানসভায় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে লেফট্যানেন্ট গভর্নরের অনুমতি নিতে হলেও প্রশাসন চলবে পুরনো নিয়মেই। পুলিশ, ভূমি ব্যবস্থা এবং পাবলিক অর্ডারের বিষয়ে লেফট্যানেন্ট গভর্নরের কোনো ভূমিকা থাকবে না। তবে বিধানসভায় যে কোনো ধরণের আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাঁর অনুমতি নিতে হবে। এই আইন কার্যত দিল্লির মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিল বলেই অভিযোগ তুলেছেন কেজরিওয়াল। তাঁর মতে, এই আইন দিল্লির জনগণকেই অপমান করে। তবে বহু বিতর্কের পরেও আইনি সংশোধন বাস্তবে প্রযুক্ত হল যথারীতি। দিল্লির সরকারি ব্যবস্থাই যেন পুরোপুরি চলে গেল কেন্দ্রের হাতে, এমনটাই মনে করছেন অনেকে।

Powered by Froala Editor