মৃত্যুর ৫ ঘণ্টা পর ‘জেগে’ উঠলেন মহিলা, আশ্চর্য ঘটনা ইকুয়েডরে

গির্জা সংলগ্ন সমাধিক্ষেত্রে রাখা কফিনবন্দি একটি মৃতদেহ। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সমাধিস্থ করা হবে। মৃতদেহ ঘিরে ইতিউতি মানুষের ভিড়। পরিবারের সদস্যরা কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েছেন, কেউ আবার স্মৃতিচারণ করছেন। ফুলের তোড়া নিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন অনেকে। এমনই সময় ঘটে গেল এক আশ্চর্য ঘটনা। কফিনের ভেতর থেকে ছিটকে এল ঠক ঠক শব্দ। ব্যাপার কী? প্রিয়জনরাও কেঁপে উঠেছিলেন কয়েক মুহূর্তের জন্য। তবে কি মৃতব্যক্তির আত্মা কোনো সংকেত দিচ্ছেন কফিন থেকে?

না, কোনো ভৌতিক ঘটনা নয় ঠিকই, তবে ‘অলৌকিক’ বললেও ভুল হবে না খুব একটা। আসলে যাঁকে মৃত বলে ধরে নিয়ে এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন, আদতে মৃত্যুই হয়নি তাঁর। বরং, সাময়িকভাবে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁর শারীরিক প্রতিক্রিয়া, হৃদস্পন্দন। সমাধিস্থ হওয়ার কয়েক মুহূর্ত আগেই প্রাণস্পন্দন ফিরে আসে তাঁর শরীরে। কফিনবন্দি অবস্থায় কাঠের বাক্সের ভেতর থেকে ধাক্কা দিয়েই তিনি জানান দেন নিজের ইহজগতে উপস্থিতির কথা।

সম্প্রতি এমনই আশ্চর্য এক দৃশ্যের সাক্ষী হল ইকুয়েডরের (Ecuador) বাবাহয়া শহর। গত শুক্রবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এই শহরের একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৭৬ বছর বয়সি প্রাক্তন নার্স বেলা মন্টোয়া (Bella Montoya)। তাঁকে এমার্জেন্সি বিভাগে রাখা হয়েছিল বেশ কয়েক ঘণ্টা। তারপর হাসপাতালের চিকিৎসক একাধিক পরীক্ষা করে ‘মৃত’ হিসাবে ঘোষণা করেন বেলাকে। জারি করা হয় মৃত্যুর শংসাপত্র। এরপর কেটে গেছে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। হাসপাতাল থেকে প্রথমে বেলার দেহ নিয়ে আসা হয় বাড়িতে। তারপর কফিন সাজিয়ে রওয়ানা দেওয়া হয় সমাধিক্ষেত্রে। এই দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেও তাঁর শরীরে কোনোরকম শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। অথচ, সমাধিস্থ করার কয়েক মুহূর্ত আগেই জ্ঞান ফিরে আসে বেলার। কফিন খুলতেই দেখা যায়, জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছেন তিনি। তৎক্ষণাৎ আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। বর্তমানে তাঁকে রাখা হয়েছে ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে। ক্রমশ শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে তাঁর, দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু এই অলৌকিক ঘটনা নিয়ে কী বলছেন বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকরা?

চিকিৎসকদের অনুমান, কার্ডিওপালমোনারি অ্যারেস্টে আক্রান্ত হন বেলা। আর সেই কারণেই তাঁর শরীরে কোনোরকম কোনোরকম সাড়া পাওয়া যায়নি পরীক্ষার সময়। অবশ্য এক্ষেত্রে চিকিৎসকের গাফিলতির সম্ভাবনাও এড়িয়ে যাওয়া চলে না মোটেই। আর সে-কথা মাথায় রেখেই বিশেষ তদন্ত কমিটি তৈরি করেছে ইকুয়েডরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মৃত্যুর আগেই কীভাবে মৃতব্যক্তির শংসাপত্র জারি করা হল— তা পর্যালোচনা করে দেখবে এই বিশেষ কমিটি।

অবশ্য এই প্রথম নয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে ঘটেছিল এই একই ধরনের ঘটনা। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ঠিক আগে কফিনে শুয়ে হঠাৎ করেই শ্বাস নিতে দেখা গিয়েছিল ৮২ বছর বয়সি এক মহিলাকে। তার ৩ ঘণ্টা আগে তাঁকেও মৃত বলে ঘোষণা করেছিল হাসপাতাল।

Powered by Froala Editor