বয়স ১০০ বছর, করোনায় বিপর্যস্তদের জন্য অর্থ সংগ্রহ ব্রিটিশ বাঙালির

পৃথিবীব্যাপী করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই এসে গেল ঈদ। আর এই উৎসবের আগে রমজান মাস ধরে প্রতিদিন রোজা পালন করেছে পৃথিবীর সমস্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ১০০ বছরের দবিউর ইসলাম চৌধুরীও। তবে শুধুই রোজা পালন নয়। এই রমজান মাস জুড়ে তিনি আরও একটি কাজ করে গিয়েছেন। করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য অর্থ সংগ্রহ করে গিয়েছেন প্রতিদিন। জীবনের অন্তিম সীমান্তে এসে তাঁর এই উদ্যোগ অবাক করেছে অনেককেই।

লন্ডনের সেন্ট আলবান্স অঞ্চলের বাসিন্দা দবিউর চৌধুরী। ১৯২০ সালে তিনি জন্মেছিলেন ব্রিটিশ শাসনাধীন আসাম উপত্যকায়। সে অঞ্চল এখন বাংলাদেশের অধীনে। তারপর ১৯৫৭ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য চলে আসেন লন্ডন। গত জানুয়ারিতে ১০০ বছর অতিক্রম করেছেন তিনি। কিন্তু এখনও নিয়মিত বৈকালিক ভ্রমণে বের হন তিনি। তাঁর মতোই আরেক শতবর্ষের যাত্রী ক্যাপ্টেন মুর ৬ এপ্রিল থেকে বিকেলে হাঁটতে শুরু করেন অর্থসংগ্রহের উদ্দেশ্যে। ক্যাপ্টেন মুর তাঁর সংগৃহীত অর্থ তুলে দিয়েছেন এনএইচএসের হাতে। ক্যাপ্টেনের এই উদ্যোগ অনুপ্রাণিত করে দবিউর ইসলামকেও। তিনিও বৈকালিক ভ্রমণের পাশাপাশি প্রতিবেশীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ শুরু করেন। তাঁর উদ্দেশ্য অবশ্য বাংলাদেশ এবং ইংল্যান্ডের বিপর্যস্ত পরিবারগুলিকে সাহায্যে করা।

তাঁর প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ১০০০ ইউরো অর্থ সংগ্রহ করা। অবশ্য এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে তাঁর মাত্র কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু তাঁর অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা বন্ধ হয় না। গোটা রমজান মাস ধরে চেষ্টা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৭ লক্ষ ইউরো সংগ্রহ করতে পেরেছেন তিনি। এখন শুধু সেই অর্থ বিপন্ন মানুষদের হাতে তুলে দেওয়া বাকি।

করোনা পরিস্থিতিতে অর্থ সংগ্রহ অভিযানের জন্য সম্প্রতি ক্যাপ্টেন মুরকে নাইট উপাধি দেওয়ার কথা জানিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। এই খবরে খুশি দবিউর ইসলামও। তাঁদের দেখে হয়তো আরও অনেকে মানুষ এগিয়ে আসবে সাহায্য করতে, এমনটাই আশা রাখেন তিনি। দবিউর ইসলাম এই কাজে তাঁর পরিবারের সহযোগিতা পেয়েছেন। কিন্তু এবার তিনি একটু বিশ্রাম নিন, এমনটাই চাইছেন পুত্র আতিক চৌধুরী। কিন্তু তাঁকে এখনও আটকে রাখা সম্ভব নয়। প্রতিদিন করোনা ভাইরাসের আক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবী জুড়ে। এই সংকট মেটার আগে অবধি বিশ্রাম নেওয়ার কথা ভাবতেই পারছেন না দবিউর চৌধুরী। বয়স তো একটা সংখ্যমাত্র। কিন্তু সমাজের প্রতি দায়িত্ব যে থেকেই যায়। কেউ কেউ সেই দায়িত্ব অনুভব করেন।

Powered by Froala Editor