নতুন বিতর্কের জন্ম রবীন্দ্রভারতী প্রাঙ্গণে, আদৌ কি বিপন্ন বাঙালির সংস্কৃতি?

পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে চারজন মেয়ে। রং বেরঙের শাড়ি, পাঞ্জাবী পরে চারিদিকে আবির খেলায় মেতেছে সবাই। বসন্তোৎসব বলে কথা! চারটি মেয়ের খোলা পিঠে রাখা চারটি শব্দ। একসঙ্গে করলে মনে পড়ে যায় গতবছর ভাইরাল হয়ে যাওয়া একটি ভিডিও’র কথা। একটি জনপ্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীতকে খানিক ‘বিকৃত’ করেই গাওয়া হয়েছিল সেখানে। সেটাই ছড়িয়ে পড়ে সব জায়গায়। যার রেশ ছুঁয়ে গেল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। আবারও বাংলার সংস্কৃতির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিতর্ক উঠল বঙ্গসমাজে।

আরও পড়ুন
হিন্দিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন বিশ্বভারতীতে, উঠছে বিতর্ক – কতটা যুক্তিযুক্ত?

সূত্রপাত রবীন্দ্রভারতীর বসন্তোৎসবে। প্রাঙ্গণে থিকথিকে ভিড়, আবির খেলতে ব্যস্ত ছেলেমেয়েরা। প্রত্যেকে যে ওই প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া, তাও নয়। কিন্তু এই একটা দিন সবাই মিলে একসঙ্গে আনন্দ করার জন্যই এখানে জড়ো হওয়া। আগে থেকেই রাস্তায় সাজানো ছিল ব্যারিকেড। ভিড় মোকাবিলায় তৎপর ছিল পুলিশও। আনন্দে ফাঁকি রাখতে কেউই যে চান না। কিন্তু বেলা গড়াতেই সেখান থেকে উঠে এল বিশেষ কিছু ছবি ও ভিডিও। জামায়, বুকে, পিঠে রং দিয়ে লিখে রাখা অশিষ্ট শব্দ। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি আসতেই সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল। আবারও উঠে এল সেই চিরাচরিত বিতর্ক। এটাই কি তাহলে বাংলার এখনকার প্রজন্মের সংস্কৃতি? গত বছরে এইরকমই একটি ঘটনা সামনে এসেছিল। রবীন্দ্রসঙ্গীতকে ‘বিকৃত’ করে গাওয়ার অভিযোগ ওঠে রোদ্দুর রায়ের বিরুদ্ধে। সংস্কৃতির অবমাননা নিয়ে সোচ্চার হয় সমাজের একাংশ। অন্য একটি অংশ কিন্তু রীতিমতো সাদরে গ্রহণ করেছিল এই বিকৃত গানকে। ‘সেদিন দুজনে’ গানটির ‘রোদ্দুর’ ভার্সন সমস্ত জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এবার রবীন্দ্রভারতীর ময়দানেও তার ছোঁয়া দেখা গেল।

আরও পড়ুন
রবীন্দ্রনাথকে ‘ব্যাঙ্গ’ করে কবিতা লিখলেন বনফুল, রবীন্দ্রনাথ তাঁকে দিলেন গল্পের প্লট

চিরকাল রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধায়, সম্মানে, ভালোবাসায় আপন করে রেখেছে বাঙালি। এইরকম ঘটনায় কি সেই শ্রদ্ধার জায়গাটাই আহত হল? বাংলা সংস্কৃতির এই ‘অবনমন’ প্রশ্নের মুখে ফেলেছে সবাইকে। শান্তিনিকেতন, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের বসন্তোৎসব আমাদের ঐতিহ্যের একটি অঙ্গ। খোদ সেই প্রতিষ্ঠানে দাঁড়িয়ে এহেন আচরণে আখেরে বাংলার আধুনিক প্রজন্মের অধঃপতন, এমনটাই মনে করছেন একাংশ। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের ঘরের মাঠে এমন ‘সাহস’ ভালো চোখে নেননি অনেকেই। সোশ্যাল মিডিয়াতেও তার ছাপ স্পষ্ট।

আরও পড়ুন
পাগল, খিল্লিবাজ নাকি প্রতিবাদী – রোদ্দুর রায়কে আমরা চিনি তো?

সেইসঙ্গে অন্য দিকের কথাও বলছেন অনেকে। এই অপশব্দগুলো বাংলার ব্যবহারিক জীবনের একটি অংশও বটে। আজ থেকে নয়, অনেক আগে থেকেই। সেটাকে অস্বীকার করা মানে তো একটা অংশকে একঘরে ঠেলে দেওয়া। আর এই ক’টা শব্দ কি রবীন্দ্রনাথের মতো একটি পর্বতকে ভেঙে ফেলতে পারে? এর আগে রবীন্দ্রসঙ্গীতের আধুনিকীকরণ নিয়েও বিতর্ক উঠেছিল বারবার। এখনও থামেনি তার রেশ। এটা কি একপ্রকার গোঁড়া মানসিকতা? সাম্প্রতিক খবর অনুযায়ী, যে চারটি মেয়ের ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তাদের নামে জোড়াসাঁকো থানায় ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে। এমনটা ঘটার দরকার ছিল কোনো? এই প্রশ্নও তুলছেন অন্য একটি অংশ। সব মিলিয়ে, আবারও সংস্কৃতির কাঠগড়ায় আধুনিক ’বং’রা…