মানবাধিকার, পরিবেশ, টিকিট মূল্য— কাতার বিশ্বকাপ ঘিরে ‘ধুলোঝড়’ একাধিক বিতর্কের!

/১৬

আর মাত্র একদিন। আগামীকালই বাঁশি বাজতে চলেছে ফুটবলের ‘বিশ্বযুদ্ধ’-এর ময়দানে। আর তা নিয়ে উত্তেজনার অন্ত নেই গোটা বিশ্বের ফুটবল সমর্থকদের। তবে শেষলগ্নে এসেও কাতার বিশ্বকাপের পিছু ছাড়ছে না বিতর্ক। ফুটবলার থেকে শুরু করে মানবাধিকারকর্মী এমনকি ফিফার প্রাক্তন কর্মকর্তাদেরও প্রতি মুহূর্তে অবাক করে দিচ্ছে কাতারের এক-একটি সিদ্ধান্ত।

/১৬

তবে আজ নয়, এই বিতর্কের শুরু অনেক আগেই। কাতারকে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়ার পরই অভিযোগ উঠেছিল জালিয়াতির। একাধিক সূত্র থেকে জানানো হয় ফিফাকে ঘুষ দিয়েই আয়োজনের ছাড়পত্র পেয়েছে কাতার। এমনকি এই অভিযোগের কারণে বরখাস্ত করা হয়েছিল তৎকালীন ফিফা কর্তৃপক্ষের ৩০ কর্মকর্তাকে। যাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটার। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর রিপোর্টেও উঠে আসে এই দুর্নীতির কথা।

/১৬

শুধু জালিয়াতিই নয়, কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য উপযুক্ত দেশ নয় বলেই দাবি করেছিলেন একাধিক ফুটবলার। কাতার মরুভূমির দেশ হওয়ায়, বিশ্বের গড় তাপমাত্রার থেকে অনেকটাই বেশি থাকে কাতারের উষ্ণতা। ফলে, ফুটবলারদের ডিহাইড্রেশনের মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে বলেই দাবি করেছেন অনেকে।

/১৬

এই সমস্যার সমাধান করতেই, সময় বদলে শীতকালে ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজন করে ফিফা। উল্লেখ্য, ফুটবলের ইতিহাসে এমন ঘটনা এই প্রথম। নভেম্বর ডিসেম্বরে ১৪-৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকবে কাতারে, এমনটাই সাফাই গেয়েছেন ফিফার কর্মকর্তারা। তবে আকস্মিক এই পরিবর্তনে ফুটবলারদের আঘাতপ্রাপ্তির সম্ভাবনা বাড়বে বলেই আশঙা করছেন বহু ফুটবল-বিশেষজ্ঞ।

/১৬

সেই তালিকায় রয়েছেন জার্মানির প্রাক্তন ক্যাপ্টেন ফিলিপ লামও। তবে শুধু শীতকালীন প্রতিযোগিতা নিয়েই নয়, লাম অভিযোগ তুলেছিলেন মানবাধিকারের বিষয় নিয়েও। ২০১১ সাল থেকেই বিশ্বকাপের জন্য পুরোদমে কাজ শুরু হয়ে যায় কাতারে। নতুন করে শুরু হয় একাধিক স্টেডিয়াম তৈরির কাজ। আর সেখানেই দিনের পর দিন ধরে শোষিত হয়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক।

/১৬

একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার দাবি অনুযায়ী, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নির্মমভাবে কাজ করানো হয়েছে শ্রমিকদের। দেওয়া হত না ছুটি। বেশি সময় কাজের তাঁরা পেতেন না বাড়তি পারিশ্রমিক। এমনকি কোভিডের ঝুঁকি নিয়েই তাঁদের কাজ করতে হয়েছে লকডাউনে। তাছাড়া কাতার ছেড়ে দেশে ফেরার জন্য আবেদন করলেও, শ্রমিকদের ভিসা কিংবা বিমানের টিকিট নিয়ে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করেছেন নির্মাণকারী সংস্থার কর্মকর্তারা।

/১৬

কাতারের এই নির্মমতার সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছেন নেপাল, বাংলাদেশ এবং ভারতের বহু পরিযায়ী শ্রমিক। কোনো নির্দিষ্টি রিপোর্ট সামনে না এলেও, একাধিক মানবাধিকার সংস্থার অনুমান সহস্রাধিক দক্ষিণ এশীয় শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে কাতারে। অথচ, এত বড়ো একটা খবর বেমালুম আলো-জাঁকজমক-বিলাসিতায় ঢাকা দিয়ে রেখেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।

/১৬

২০২০-২১ সালে বিতর্কের এই তালিকাকে আরও দীর্ঘায়িত করে কাতার স্বয়ং। কাতার বিড ডেলিগেশনের শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ইজরায়েল ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য কোয়ালিফাই করলেও, টুর্নামেন্টে ইজরায়েলকে স্বাধীন দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেবে না কাতার। সে-সময় প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন বহু ফুটবল তারকাই। শেষ অবধি অবশ্য প্রতিযোগিতার ছাড়পত্র জোগাড় করতে ব্যর্থ হয় ইজরায়েল।

/১৬

তবে এই বিতর্কের পরেও এতটুকু নিজের অবস্থান থেকে সরেনি কাতার। অনলাইন টিকিট বিক্রি শুরু হলেই ফের ঘৃতাহুতি চড়ে এই বিতর্কের আগুনে। দেখা যায়, ‘ইজরায়েল’ বলে কোনো দেশের নামই তালিকায় রাখেনি টিকিটি বিক্রিকারী সংস্থা। বরং, সেখানে লেখা হয়েছে ‘অধিকৃত প্যালেস্তাইন ভূখণ্ড’! অর্থাৎ, ফিলিস্তিনি পরিচয় নিয়েই টিকিট কাটতে বাধ্য করা হয় ইজরায়েলি ফুটবলপ্রেমীদের। শেষ অবধি এই বিতর্কে হস্তক্ষেপ করে, ইজরায়েলি সমর্থকদের জন্য বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করে ফিফা।

১০/১৬

এই বিতর্কে রেশ পড়তে না পড়তেই, বিতর্ক শুরু হয় সমকামিতা নিয়ে। কাতার জানায়, বিশ্বকাপে সমকামীদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও, সে-দেশে থাকাকালীন সমকামে জড়াতে পারবেন না তাঁরা। এমনকি এ-ধরনের ঘটনা নজরে এলে ‘হারাম’-এর দোহাই দিয়ে গ্রেপ্তারও করা হবে বলেই জানিয়ে দেয় কাতার কর্তৃপক্ষ। মজার বিষয় হল, কাতারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছিলেন প্রাক্তন ফিফা প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটার, ২০১০-এ কাতারকে বিশ্বকাপ আয়োজনের ছাড়পত্র দিয়েছিলেন যিনি স্বয়ং!

১১/১৬

দিন দুয়েক আগে আরও একবার বিতর্ক ঝড় ওঠে কাতারের আরও একটি বক্তব্যে। জানানো হয়, ‘খোলামেলা’ পোশাক পরতে পারবেন না মহিলারা। কাঁধ এবং হাঁটু ঢাকা রাখতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে। এবং এই বিষয়টি যথেষ্ট কড়াভাবে নজরদারি করবে কাতার প্রশাসন। এমনকি স্টেডিয়াম, মিউজিয়াম ও অন্যান্য দপ্তরে পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষ ক্যামেরাও লাগিয়েছে কাতার কর্তৃপক্ষ। নারী তথা ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠলেও, এখনও পর্যন্ত নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেনি কাতার।

১২/১৬

তবে নারী অধিকার অবলঙ্ঘনের অভিযোগ এই প্রথম নয়। বিশ্বকাপের জন্য কাতারে বিশেষভাবে নির্মিত স্টেডিয়ামগুলির নকশা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই শুরু হয়েছিল এই বিতর্ক। মহিলাদের যৌনাঙ্গের আকৃতিতে নির্মিত হয়েছে একাধিক স্টেডিয়াম। তাছাড়া দোহা-সহ একাধিক শহর সাজানো হয়েছে পুরুষ যৌনাঙ্গের আকারের মূর্তি দিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই যা নিয়ে ঝড় উঠেছিল বিতর্কের।

১৩/১৬

এসব বিতর্কের মাঝেই চমকে দিয়েছিল কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালের টিকিটের দাম। গড়ে ফাইনালের টিকিটের দাম ৬৮০ পাউন্ড। অর্থাৎ, ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৬৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ, রাশিয়া বিশ্বকাপের থেকে টিকিটের মূল্য এক ধাক্কায় বেড়েছে ৪০ শতাংশ। শুধু ফাইনালই নয়, প্রতিটি ম্যাচের গড় টিকিটের দামও গতবারের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৩ শতাংশ। বলতে গেলে, এককথায় টিকিটের ক্ষেত্রেও ফুটবলপ্রেমীদের ‘শোষণ’ করছে কাতার।

১৪/১৬

এ তো গেল মানবাধিকারের প্রসঙ্গ। এবার আসা যাক নিরাপত্তার বিষয়ে। প্রথমত মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশে সন্ত্রাসবাদী হামলা হতে পারে, সেই সম্ভাবনার কথা বহু আগে থেকেই জানিয়েছিলেন একাধিক দেশের নিরাপত্তা সংস্থা। ব্যাপক পরিমাণ পাশ্চাত্যের সমর্থকদের উপস্থিতির কারণে বিশ্বকাপ আইএস অনুসারীদের সহজ টার্গেট হয়ে উঠতে পারে বলেই উঠছে অভিযোগ।

১৫/১৬

এই বিতর্ক আরও ঘনীভূত হয়, বিশ্বকাপ চলাকালীন স্টেডিয়াম ও কাতারের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলি নিরাপত্তার দায়ভার পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে দেওয়ার পর থেকে। পাকিস্তানকে যখন এই দায়িত্ব দেওয়া হয়, তখনও পাকিস্তান গ্রে-লিস্টের অন্তর্গত। সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একটি দেশের হাতে নিরাপত্তার দায়িত্ব তুলে দেওয়াকে নেহাতই ‘ছেলেখেলা’ বলে চিহ্নিত করেছেন অনেকেই।

১৬/১৬

বিশ্বকাপের শেষলগ্নে এসে এসকল পরিস্থিতির বদল বা সংশোধনের কোনো পথ নেই আর। তা নিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না ফুটবল নিয়ামক সংস্থা ফিফাও। বিতর্ক ভুলে বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের খেলাতেই মনোসংযোগ করতে বলছে তারা। এখন দেখার শেষ অবধি কতটা শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজিত হয় এ-বারের ফুটবল মহাযুদ্ধ…

Powered by Froala Editor