বিলুপ্তির মুখ থেকে বাঁচাতে কারিব ভাষায় পঠনপাঠনের উদ্যোগ তরুণ-তরুণীদের

পরিসংখ্যান বলছে, পৃথিবীতে প্রতি ২ সপ্তাহে একটি করে ভাষার মৃত্যু ঘটছে। আর এই বিলুপ্তপ্রায় ভাষাদের (Language in Danger) অধিকাংশই নানা আদিবাসী এবং উপজাতি সম্প্রদায়ের কথ্য ভাষা। তেমনই একটি ভাষা গুয়ানার উপজাতিদের কারিব (Carib) ভাষা। সঠিক পরিসংখ্যান তো দূরের কথা, এই ভাষা সম্পর্কে ন্যূনতম তথ্যও নেই গবেষকদের হাতে। তাঁরা শুধু জানেন, এই মুহূর্তে খুব বেশি হলে ২ হাজার মানুষ কারিব ভাষায় কথা বলেন। আর তাঁরাও জীবনের শেষ লগ্নে এসে গিয়েছেন। ফলে আর কতদিন এই ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে, জানেন না কেউই। সরকারি স্তরেও তেমন উদ্যোগ চোখে পড়ে না। শেষ পর্যন্ত ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে হাত মিলিয়েছেন উপজাতি সম্প্রদায়ের তরুণ তরুণীরাই।

মূলত কেবানা গ্রামকে ঘিরে কারিব ভাষাভাষীর মানুষদের বসবাস। আর এই গ্রামেরই মেয়ে আলথি হার্ডিং। উচ্চশিক্ষার জন্য দীর্ঘদিন গুয়ানার রাজধানী জর্জটাউন শহরে থেকেছেন তিনি। তবে গ্রামে ফিরেই ২০১৯ সালে তিনি স্থির করেন, কারিব ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাই নিজের উদ্যোগেই তৈরি করেছেন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে পড়াশোনা হয় কারিব ভাষাতেই। পড়াশোনার জন্য বইপত্রও লিখেছেন হার্ডিং এবং তাঁর সহকর্মীরা। অন্তত ৩০ জন তরুণ তরুণী অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছেন নিজেদের ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে। এর মধ্যেই এসে পড়ে করোনা অতিমারী। ফলে বিদ্যালয় পরিচালনার কাজ কিছুটা বাধা পায়। কিন্তু এর মধ্যে নতুন করে প্রস্তুতি নেওয়ারও কিছুটা সময় পেয়ে যান হার্ডিং এবং তাঁর সহকর্মীরা।

২০১৯ সালকে ভাষা সংরক্ষণ বছর হিসাবে ঘোষণা করেছিল ইউনেস্কো। তবে ইউনেস্কোর পরিসংখ্যানেও উঠে আসেনি কারিব ভাষার কথা। গুয়ানার ঠিক কোন অংশের মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন, তারও উল্লেখ ছিল না সেখানে। তবে ভাষা যে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে। তাকে বাঁচিয়ে রাখার কাজটাও তাই একেবারে ব্যক্তিগত স্তর থেকেই গড়ে ওঠে অনেক সময়। হার্ডিং এবং তাঁর সহকর্মীদের এই উদ্যোগ কতটা সফল হবে, সেটা বলার সময় এখনও আসেনি। কিন্তু এমন উদ্যোগগুলোর আজকে ভীষণ প্রয়োজন।

Powered by Froala Editor